WHAT'S NEW?
Loading...

ওবামার উন্থান যেভাবে


জসিম উদ্দিন



তিনি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এক কৃষ্ণাঙ্গ। তার পিতা ছিলেন মুসলমান। যার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায়। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কালো প্রেসিডেন্ট।



কেনিয়ান বাবা বারাক হোসেন ওবামা সিনিয়র ও মার্কিন মাতা এন ডানহামের গর্ভে ম

ার্কিন ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বারাক হোসেন ওবামা জুনিয়রের জন্ম। মার্কিন দ্বীপ হাওয়াই এর রাজধানী হনুলুলুতে ১৯৬১ সালের ৪ আগস্ট পড়তে আসা ওবামা সিনিয়র বাবা হন । বৃত্তি নিয়ে সুদূর আফ্রিকা থেকে পড়তে এসেছিলেন হাওয়াই এর রাজধানী হনুলুলুতে। ভালো লেগে যায় আমেরিকার মূল ভূখণ্ডের টেক্সাস থেকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ডানহামকে। ১৯৬০ সালের বিয়ে হওয়ার পরের বছরই তাদের ঘর আলো করে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রত্যাশী ওবামা জুনিয়র। মাতা ডানহাম জন্মসূত্রে খ্রিষ্টান। সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি ওবামা সিনিয়রের। হার্ভার্ডে হায়ার স্টাডির জন্য যাওয়া বাবার সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় মায়ের। মা বিয়ে করেন এবার এক ইন্দোনেশীয়কে।


ওবামার ছয় থেকে ১০ বছর বয়স কাটে ইন্দোনেশিয়ায়। এখানে তিনি একটি খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। সংবাদমাধ্যমে ঘনিষ্ঠজনদের উদ্ধৃতি দিয়ে তার স্কুল জীবনের একটি ঘটনা এসেছে। শিশুদের বলা হয়েছিল কে কী হতে চায় তা যেন তারা একটি লগবইয়ে লিখে রাখে। সবাই যখন লিখছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর পাইলট হওয়ার কথা, সেখানে একটি মাত্র ব্যতিক্রম পাওয়া যায়। শিশুটি লিখেছিল সে প্রেসিডেন্ট হতে চায়। কোন দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চায় সেটা উল্লেখ ছিল কি না জানা যায়নি। তবে নিশ্চয়ই সেটি যুক্তরাষ্ট্র। সেই শিশুটিই আজকের বারাক হোসেন ওবামা। প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে নামলে ওবামার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডার আশ্রয় নেয়া হয়। বলা হয় ইন্দোনেশিয়ায় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন ওবামা। খ্রিষ্টান হওয়া সত্ত্বেও তাকে মুসলিম বানানোর চেষ্টা হয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কথিত নায়ক ওসামা বিন লাদেনের সাথেও তার নামের তুলনা জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।



এবার ওবামার পিতার গোষ্ঠীর দিকটি নিয়ে একটু আলোকপাত করা যাক। পিতার নামও হুবহু বারাক হোসেন ওবামা। তিনি কেনিয়ার সায়া জেলার নিয়াংগমো-কোগিলোতে ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। গহিন আফ্রিকার প্রত্যন্ত গ্রামে তিনি বেড়ে ওঠেন। সরকারি বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতির ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নেন। কেনিয়া সরকারের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ছিলেন। বৃত্তি পাওয়ার আগে তিনি ছাগল চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কেনিয়ার এই জায়গাগুলোতে জুনয়ির ওবামার দাদী, চাচাসহ অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন বসবাস করেন। যেখানে টেলিভিশন নেই। তবুও তারা জানেন তাদের এক বংশধর এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তারা দোয়াও করছেন ওবামার জন্য। ১৯৮২ সালে রাজধানী নাইরোবিতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ওবামার পিতা প্রাণ হারান। মৃত্যুকালে তিন স্ত্রী ও ছয় সন্তান রেখে যান তিনি। ওবামা জুনিয়রসহ তার পাঁচ সন্তানই ব্রিটিশ ও আমেরিকার নাগরিক।


ওবামার প্রপিতামহের নাম হোসেন ওনিয়াংগো ওবামা। তিনি ১৮৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নাইরোবির খ্রিষ্টান মিশনারিতে কাজ করতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশদের হয়ে যুদ্ধ করেন। ইউরোপ ও ভারত সফর শেষে তিনি আফ্রিকার অন্য একটি দেশ জাঞ্জিবারে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। অদ্ভূত ব্যাপার হলো জীবনের একটি বড় অংশ খ্রিষ্টান মিশনারি ছিলেন, কিন্তু শেষ জীবনে এসে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তারই পৌত্র ও জুনিয়র ওবামার পিতা সিনিয়র ওবামা বিয়ে করেন খ্রিষ্টান এক ভদ্রমহিলা ডানহামকে।



এবার তার মায়ের দিকের পূর্বপুরুষদের ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করা যাক। ওবামা জুনিয়রের মা স্টেনলে এন ডানহাম ১৯৪২ সালে কানসাসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সালে ক্যান্সারে মারা যান। তার পিতা স্টেনলে আরমার ডানহাম। তিনি ১৯১৮ সালে কানসাসে জন্মগ্রহণ করে। তার স্ত্রী অর্থাৎ এন ডানহামের মা মেডিলিন লি পাইন ১৯২২ সালে কানসাসে জন্ম নেন। তার মায়ের দিকটা আগাগোড়া আমেরিকান।



১৯৮৮ সালে মিশেল রবিনসনের সাথে হার্ভার্ডে পরিচয়। ওবামা এক সাথে কাজ করেন কয়েক বছর। ’৯২ সালে তাকে বিয়ে করেন। তাদের দুই কন্যা রয়েছে। ওবামার রয়েছে সৎ বোন মায়া সোয়েটরো। ১৯৮৭ সালে সৎ বাবা মারা যাওয়ার পর বোনের সহযোগিতায় ওবামা সব সময় অকৃপণ। মায়া হনুলুলুতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মাকে ইন্দোনেশিয়ায় রেখেই হাওয়াইয়ে দাদা-দাদীর কাছে ফিরে আসেন আজকের ওবামা। স্কুলজীবনের বাকি সময়টা এখানে কাটিয়ে তিনি চলে যান নিউইয়র্কে। এখানকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে তিনি স্নাতক হন। চলে যান শিকাগোতে, সেখানে তিনি আইনের ওপর পড়াশোনার পাশাপাশি গির্যাকেন্দ্রিক সামাজিক কাজের সাথে জড়ান। দুস্থদের জীবনমান উন্নয়নে নিজেকে সঁপে দেন। তিনি অনুভব করেন আইন পরিবর্তন ছাড়া এদের সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এরই মধ্যে ১৯৯১ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নেন। প্রথম আফ্রিকান হিসেবে হার্ভার্ডের ল’ রিভিউ কমিটির চেয়ারম্যান হন। এরপরই তিনি শিকাগোতে একজন নাগরিক অধিকার আইনবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন একই সাথে সাংবিধানিক আইনের শিক্ষকতা শুরু করেন। ওকালতিতে সুনাম তাকে দ্রুত সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিচিতি এন দেয়।


১৯৯৬ সালেই অল্প বয়সে ইলিনয়ের সিনেটর নির্বাচিত হন। সিনেটে তিনি জনস্বাস্থ্য ও কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০০৪ সালের ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় সম্মেলনে কি নোট পেপার উপস্থাপন করে তিনি মার্কিন রাজনীতির উদীয়মান তারকা বনে যান। এর কয়েক মাস পরই সিনেট নির্বাচনে তার ভূমিধস বিজয় হয়। তিনি ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। সে সময় টাইম ম্যাগাজিন কাভার স্টোরি করে ‘ওয়ান অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ইনফ্লুয়েন্সিয়াল পিপল’ শিরোনামে। তাকে আমেরিকার রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রিয় রাজনীতিবিদ বলে উল্লেখ করা হয় ওই স্টোরিতে। ইতোমধ্যে একজন লেখক হিসেবেও পাঠকের মন জয় করেছেন ওবামা। শৈশব এবং কর্মজীবনের প্রাথমিক স্মৃতি নিয়ে ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত তার প্রথম বই ‘ড্রিমস ফর্ম মাই ফাদার : এ স্টোরি অব রেইস অ্যান্ড ইনহেরিটেন্স’। ২০০৬ সালে পেয়েছেন গ্রেমি অ্যাওয়ার্ড। ‘অডাসিটি অব হোপ’ প্রকাশিত হওয়ার পর বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকার শীর্ষে ছিল। এরপর লিখেন স্ত্রীর সাথে মিলে শিশুদের জন্য একটি বই। এ বই থেকে উপার্জিত অর্থ দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে দান করে দিয়েছেন।



ওবামাকে মুসলমান বলে ব্যঙ্গ করা হলেও আগের আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের মতো তিনিও ইহুদি স্বার্থের রক্ষক। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই ঘোষনা দিয়েছিলেন জেরুসালেমকে রাজধানী করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবেন। তার এ বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছিলো তৎকালীন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট। ওবামা কৃষাঙ্গ হয়েও দুই বার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। এগুলোর পেছনে কাজ করেছে তার মেধা ও যোগ্যতা। অবশ্যই আমেরিকান মূল্যবোধের সাথে টিম স্পিরিট। বর্নবিদ্বেষ আর পিতার ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে প্রচারনা তাকে হীনমন্য করেনি। পুরোপুরিভাবে তিনি আমেরিকান স্বার্থ দেখছেন।


 


 

0 comments:

Post a Comment