আপনি যখন দীর্ঘ রাতের পর ঘুম থেকে জাগেন, তখন আপনার দেহ সম্ভবত ১২ ঘণ্টা কোনো ধরনের খাবার পায়নি। এর মানে হলো আপনার জ্বালানি প্রয়োজন। আরো স্পষ্টভাবে বললে বলতে হয়, আপনার রক্তধারায় সম্ভবত গ্লুকোজের স্বল্পতা তৈরি হয়েছে।
নাশতা না খাওয়া মানে আপনি স্বল্প ব্লাডসুগার নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন, অথচ আপনার মস্তিষ্কের প্রয়োজন ব্ল
াডসুগারের, তার কাজ ঠিকমতো চালানোর জন্য। ফলে আপনার নাশতা না খাওয়া মানে মস্তিষ্ককে পুরোদমে কাজ করতে দিচ্ছে না। এতে করে আপনার বমি বমি ভাব হতে পারে, নার্ভাস হয়ে পড়তে পারেন কিংবা বোধশক্তি কমে যেতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব স্কুলে শিশু নাশতা করে, তাদের স্মরণশক্তি অনেক ভালো, তাদের যেসব ক্লাসমেট করে না, তাদের চেয়ে বেশি শেখে।
অ্যান্ডোক্রিনোলজিস্ট (অন্তঃক্ষার গ্রন্থির রোগ ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ) ডা: সুমা ড্রনাভেলির মতে, ‘সকালের নাশতা বাকি দিনের ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।’ অনেক লোক আছে, যারা ক্যালরি কমানোর জন্য ব্রেকফাস্ট মিস করে, কিন্তু তারা আবার দুপুর বা রাতের খাবার খায় একটু বেশি। তাদের বেশির ভাগই আবার রাতে বা দুপুরে চর্বিজাতীয় খাবার খায়। ফলে কোনো লাভই হয় না, ক্ষতির মাত্রাই বেশি থাকে।
সকালের নাশতা মিসকারীদের মধ্যে দুই বেলার মাঝখানে জাঙ্কফুড খাবার প্রবণতাও সৃষ্টি হয়। ভেনিজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ওজনযুক্ত যেসব নারী ডায়েটিং করছেন, তারা সকালে ভারী নাশতা করলে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশি সুফল পান। এতে প্রমাণিত হয়, নাশতা করলে কেবল ওজন হ্রাসই পায় না, বরং সেই সাথে ব্লাডসুগারও কাক্সিক্ষত মাত্রায় থাকে।
তা ছাড়া সকালের নাশতা করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস সৃষ্টিকারী ইনস্যুলিন প্রতিরোধের ক্ষমতা ৫০ ভাগ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সারা দিন বসে থাকলে ক্ষতি কী?
সারা দিন সোফায় বসে অলসভাবে কাটানোকে অনেকে সময়ের অপচয় ভাবতে পারেন। তবে অপচয় হোক আর না হোক, আপনার দেহের ভেতরে কিন্তু বড় ধরনের ওলট-পালট ঘটে যাবে। আপনার রক্তধারায় থাকা গ্লুকোজ নানা গোলমাল পাকাতে থাকে।
হাঁটাহাঁটি বা অন্য কোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করলে পেশিকোষগুলো গ্লুকোজ শুষে নিয়ে জ্বালানি তৈরি করে। কোনো দিন যদি আপনি পেশিগুলোতে যথেষ্ট কাজ না দেন, তবে গ্লুকোজ অব্যবহৃত হয়ে থাকবে। দীর্ঘ সময় ধরে এমনটা হতে থাকলে দু’টি বড় ধরনের ক্ষতি হবে : প্রথমত, অব্যবহৃত গ্লুকোজ রূপান্তরিত হবে চর্বিতে এবং দ্বিতীয়ত, রক্তের মধ্যে থাকা গ্লুকোজ এজিই নামের বিপজ্জনক যৌগ গঠন করতে পারে, যা স্নায়ু ও রক্তকোষগুলোর ক্ষতি করতে করে।
এ কারণেই উচ্চমাত্রার ব্লাডসুগারের কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা কিডনি রোগ, স্নায়ু ক্ষতি ও অন্ধত্বের দিকে এগোতে থাকে। বাইরে হাঁটাহাঁটি করলে এসব বিপদ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ব্যায়াম নির্ভরযোগ্য একটি চর্বিনাশক এবং আরো অনেক উপকারের পাশাপাশি এ থেকে এজিইর মাত্রা কমানো যায়।
আর বসে থাকা মানে ব্লাডসুগার বাড়ানো, ওজন বৃদ্ধি করা এবং আরো নানা সমস্যা সৃষ্টি করা।
0 comments:
Post a Comment