WHAT'S NEW?
Loading...

আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুদের দিয়ে বিকৃত যৌনাচার

 


মেহেদী হাসান
রিচার্ড কারের বয়স তখন ১৪। এ বয়সে তার আশ্রয় হয় পূর্ব বেলফাস্টে কিনকোরা নামে একটি শিশু আশ্রয় কেন্দ্রে। রিচার্ড কার জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে আসার দুই বছরের মাথায় তাকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার মত অনেক শিশুকে প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, যাজক, পপস্টার, গোয়েন্দা, রাজপরিবারের সাথে সম্প

র্কযুক্ত কোন কোন ব্যক্তি এবং বিচারকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে সরবরাহ করা হত তাদের মনোরঞ্জনের জন্য।


রিচার্ড জানান শিশুদের প্রতি বিকৃত যৌনাচারে আসক্ত এরকম প্রভাবশালী একটি গ্রুপের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবজার করা হয় তাকে। আর এ গ্রুপটি ছিল ওয়েস্টমিনিস্টার এলাকার। ওয়েস্টমিনিস্টার হল কেন্দ্রীয় লন্ডনের একটি এলাকা যেখানে লন্ডন পার্লামেন্ট, বাকিহাম প্যালেসসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে । রিচার্ড কারসহ শিশু আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ছোট ছোট শিশুদের এখানকার অনেক প্রভাবশালীদের কাছে সরবরাহ করা হত তাদের বিকৃত যৌন ক্ষুধা নিবারনের জন্য।


যেটা আরো চমকপ্রদ তাহল কিনকোরা শিশু সদনটি পরিচালনা করত কট্টরপন্থী প্রোটেস্ট্যান্ট এর প্রতি অনুগত ‘তারা’ নামে একটি গ্রুপ এবং গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৫ এর একজন সোর্স। তাদের পরিচালিত এ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শিশুদের সরবরাহ করা হত লন্ডনের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিকৃত যৌনাচারের জন্য। এমনকি যেসব শিশু এ কাজে রাজি হতনা তাদের হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।


রিচার্ড কারের বয়স এখন ৫৩। তিনি জানান, তার সাথে আরো যে দুজন শিশুকে একসাথে বেলফাস্ট থেকে লন্ডনে আনা হয়ে

ছিল সে দুজন আত্মহত্যা করেছে পরবর্তীতে।


নিক নামে আশ্রয় কেন্দ্রের একজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন একজন এমপি কর্তৃক ১২ বছরের একটি শিশুকে হত্যা করতে তিনি দেখেছেন। সেটা ১৯৮০ সালের ঘটনা। পরের বছর আরেকটি শিশুকে হত্যার সময় সেখানে একজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিল। দুটি শিশুই ছিল আশ্রয়কেন্দ্রের এবং তাদেরকে যৌনক্ষুধা মেটানোর জন্য আনা হয়েছিল। এ ঘটনায় বিচারপতি লওয়েল ডডারের নেতৃত্বে তদন্ত চলছে । বহু বছর পর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এ ঘটনার তদন্তে নেমেছে।


রিচার্ড কার জনানা, এমআই৫ এর সাদা পোশাকের লোকজন এসে তাকে হুমকি দিয়েছে ঘটনা ফাঁস না করার জন্য। রিচার্ড কার জানান ১৯৭৫ সালে তাকে কিনকোরা শিশুসদনে আনা হয়। সেসময় কারা কিভাবে তার মাধ্যমে বিকৃত যৌন ক্ষুধা মিটিয়েছে তাদের অনেকের চেহারা এখনো তার মনে আছে এবং মনে আছে অনেক ঘটনাও। তাদের অনেকে এতই প্রভাবশালী এবং রাজনীতিতেও এতই ক্ষমতাবান যে, তাদের নাম নিতে তিনি ভীত।


লন্ডনে আনার পর এম গেস্ট হাউজ এবং ডলফিন স্কায়ার কমপ্লেক্সে তাকে নিয়ে যাওয়া হত প্রায়ই। প্রথম দিনের একটি ঘটনার বিবরন দিয়ে তিনি বলেন, একটি লোক এসে তার হাত বাঁধল। তিনি কিছু বুঝতে পারলেননা। কিন্তু তার হাত পিছমোড়া করে বাঁধা হল। এরপর পাশের রুম থেকে কয়েকজন আসল।
একজন এমপি কর্তৃক তাকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিবরন দিয়ে তিনি বলেন এ নোংরা লোকটি তাকে একটি বাসায় নিয়ে গেল। এরপর সে মদ পান করল এবং আমাকেও পান করাল। এরপর সে আমার ওপর ঝাপিয়ে পড়ল তার বিকৃত ক্ষুধা মেটানোর জন্য।


নির্যতানের হাত থেকে মুক্তি পাবার পর রিচার্ড কার দেশ ত্যাগ করে চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দীর্ঘদিন পর তিনি দেশে এসেছেন এবং যেসব স্থানে তাকে নির্যাতন করা হত সেসব স্থান সফর করেছেন।


বিকৃত শিশু যৌনাচারীদের সাথে জড়িতদের কারো কারো নাম পরিচয় প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের কেউ কনজারভেটিভ পার্টির, কেউ টোরি পার্টির প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী এমপি।


স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জানিয়েছে ডলফিন স্কয়ারকে জড়িয়ে তিনটি ছেলেকে হত্যার অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য এবং সত্য। এর সাথে শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত তিনজন প্রভাবশালীর একটি গ্রুপ জড়িত রয়েছে।


বৃটেনে বর্তমানে নির্বাচনী রাজনীতির লড়াইয়ে কিনকোরা শিশু সদনের শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রতিক্ষকে ঘায়েল করতে বেশ ভালভাবেই রশদ জোগাচ্ছে।
৭০ এর দশকের এ ঘটনা নির্বাচনের পূর্বে সামনে নিয়ে আসার পেছনে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যও কাজ করে থাকতে পারে।


গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় রিচার্ড কারের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় লন্ডনের চ্যানেল ৪ টিভিতে।


 

0 comments:

Post a Comment