২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর সকালে আঘাত হানা সুনামিতে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। দশ বছর পর সেই এলাকার খবর জানাচ্ছেন পুরস্কার জয়ী সাংবাদিক কিরা কে।
‘ব্যুরো ফর ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টিং’ বা বিআইআর-এর নির্বাহী পরিচা
লক কিরা কে সুনামির আগে পরে বেশ কয়েকবার আচে গেছেন। ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সুনামির পর ওই এলাকায় ব্যাপক পুনর্গঠন কাজ হয়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে আচের গৃহযুদ্ধ বন্ধ হয়েছে - যা একটি ইতিবাচক দিক।
ডিডাব্লিউ : দশ বছর আগে সুনামির পর ইন্দোনেশিয়ার অবস্থা আপনি কেমন দেখেছিলেন?
কিরা কে : সুনামির আগেও আমি আচেহ-তে গিয়েছিলাম। আচেহ-তে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধ কভার করতে ২০০২ সালে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সেসময় আচেহের যে অবস্থা আমি দেখেছিলাম সুনামি পর সেটা পুরোপরি বদলে গিয়েছিল।
সুনামির দুই সপ্তাহ পর আমি আচে পৌঁছেছিলাম। জরুরি সহায়তা হিসেবে যে তৎপরতা চলছিল সেটা ঠিকই ছিল। দুর্গতরা খাবার ও আশ্রয় পাওয়া শুরু করেছিল। ততদিনে বেঁচে থাকাদের খুঁজে পাওয়ার আশা মিইয়ে এসেছিল।
আচেহের প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। তখনও নিখোঁজ ছিল আরো প্রায় ৩০ হাজার। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। ভূমির মালিকানা ফিরে পাবার মতো কাগজপত্রও পানিতে ভেসে গিয়েছিল। ধ্বংস্তুপের নীচে মৃতদেহ পড়েছিল। মৃতদেহগুলো ক্যারাভানে করে নিয়ে গণকবর দেয়া হয়েছিল। বিভীষিকাময় সেই সময়গুলোতেও আচেহের মানুষ পুনর্গঠিত হয়ে নতুন জীবন শুরুর কথা ভাবছিল।
ডিডাব্লিউ : এই দুর্যোগ সবচেয়ে বেশি দুর্গত এলাকা, যেমন রাজ্যের রাজধানী বান্দা আচেহের মানুষের জীবন কীভাবে বদলে দিয়েছিল?
কিরা কে :এবার গ্রীষ্মে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। বান্দা আচেহ ও তার আশেপাশের এলাকা একেবারে চেনা যাচ্ছিল না। শহরের অনেক ভবন হয় নতুন করে নির্মিত, না হয় বেশ ভালোভাবে সংস্কার করা। সুনামির পর অনেকে সমুদ্র সৈকতের কাছে না থেকে দূরে পাহাড়ের ওপরে বসবাস করতে চলে গেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সেখানে বসবাসের জন্য নতুন বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে, সেখানে ‘জ্যাকি চেন হিল’ নামে একটি জায়গা রয়েছে, যেটা এই অভিনেতা তৈরি করে দিয়েছেন। অবশ্য অনেকে সৈকতের কাছেই আবার বাসা বেঁধেছেন। জীবিকার প্রয়োজনে সেখানে থাকাই ভালো বলে মনে করছেন তারা। দাতাদের সহায়তায় ওই এলাকার অনেক রাস্তাঘাট সংস্কার হয়েছে।
পুনর্গঠন কাজের শুরুতে কিছুটা দুর্নীতির খবর পাওয়া গেলেও ১০ বছর পর মনে হচ্ছে কাজ ভালোই হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কাজ করার সুযোগ দেয়ায় ইন্দোনেশিয়ার সরকার ধন্যবাদ পেতে পার
সুনামিতে সব কিছু ধ্বংস হলেও টিকে আছে মসজিদটি
ডিডাব্লিউ : মনস্তাত্ত্বিক স্তরে কেমন পরিবর্তন চোখে পড়েছে?
কিরা কে : এটা বলা কঠিন। সুনামির পর বাসিন্দারা যেন মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেন, সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। অবশ্য সরকারের কারণে বেশিদিন সেগুলো চলতে পারেনি। আচেহের কেউ কেউ তাদের মানসিক আঘাতের কথা জানিয়েছে। অবশ্য অনেকেই বলেছে, শক্ত ধর্মীয় বিশ্বাস তাদের দুঃখ ভোলাতে সহায়তা করেছে। তাদের মতে, গৃহযুদ্ধটি ছিল ‘মানুষের তৈরি’ আর সুনামি ‘আল্লাহর তৈরি’। সুনামির পর আচেহের মানুষ বেশি বেশি ধর্ম পালন শুরু করেছে। কারণ সুনামিকে তারা আল্লাহর গজব হিসেবেই দেখছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সুনামিতে গ্রামের পর গ্রাম ধংসস্তুপে পরিণত হলেও অনেক মসজিদ দাঁড়িয়ে ছিল।
0 comments:
Post a Comment