সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
বিরোধী দলের চলমান অবরোধ-হরতালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয় ক্রমে বেড়েই চলেছে। এসংক্রান্ত কাজের বিভিন্ন সংস্থা থেকে ইতোমধ্যে শতাধিক কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এরই আলোকে গতকাল অবরোধ-হরতালে রেললাইন পাহারায় নিয়োজিত আনসার বাহিনীর জন্য ১৩ কোটি টাকা ছাড়ের অনুমোদন করা
হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি আনুষ্ঠানিক পত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, চলমান হরতাল-অবরোধে রেলের নাকশতা রোধে এক হাজার ৪১টি পয়েন্টে আট হাজার ৩২৮ জন আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। তিন মাস বা ৯০ দিনের জন্য তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ জন্য আনুমানিক ব্যয় হবে ২৬ কোটি টাকা। চিঠি পাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪৫ দিনের জন্য ১৩ কোটি টাকা অর্থ ছাড়ের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়।
এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো হয়। গতকাল এই ১৩ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। অবরোধ দীর্ঘায়িত হলে বাকি অর্থ পর্যায়ক্রমে ছাড় করা হবে।
সূত্র জানায়, অবরোধ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুলিশের জন্য ৮৩ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। র্যাবের জন্য চাওয়া হয়েছে অতিরিক্ত ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবরোধ-হরতাল মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়ের করা হয়েছে। এসব বাহিনীর খরচ মেটানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শত কোটি টাকারও বেশি অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আনসার বাহিনীর জন্য ১৩ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বাহিনীর জন্যও অতিরিক্ত অর্থ ছাড় করা হবে।
৩৪ দিন ধরে চলা অবরোধ ও হরতালে এ পর্যন্ত ৯০ জন মানুষ মৃত্যু বরণ করেছেন। এর পাশাপাশি পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরো কয়েকজন মারা গেছেন।
এ দিকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গতকাল বলা হয়েছে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অবরোধ ও হরতালের কারণে তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
ডিসিসিআই, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, রিহ্যাব, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, অবরোধ ও হরতালে ২৫ দিনে পরিবহন খাতে ৯ হাজার ৬০ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র দোকানিদের ৯ হাজার কোটি, কৃষকের ৮ হাজার ৬৪০ কোটি, শিল্প খাতে ৬ হাজার ৫৬৯ কোটি, পর্যটন খাতে ৬ হাজার কোটি, নির্মাণ খাতে এক হাজার ৮০ কোটি, ফ্যাশন শিল্পে ৮৭৫ কোটি, পোলট্রি খাতে ৫৪০ কোটি, প্লাস্টিক খাতে ৪১৮ কোটি, চামড়া খাতে ৪৯৫ কোটি, প্রকাশনা শিল্পে ৫০০ কোটি, ট্রাভেল এজেন্টদের ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বীমা খাতে ৪৫০ কোটি, প্লাস্টিক খাতে ৩৬০ কোটি, ফুটপাথের হকারদের ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অবরোধ বাড়লে এই ক্ষতি আরো বাড়বে।
ডিসিসিআই এক তথ্যে বলেছে, প্রতিদিন অবরোধের কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতি দুই হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।
0 comments:
Post a Comment