মুগডাল পৃথিবীটাকে বাঁচাতে পারে। কথা শুনতে বেখাপ্পা লাগছে, তাই না? কিন্তু মুগডাল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গরিব মানুষের খাবার জোগাতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে।
‘নারী ও শিশুরা খাবার পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকে। পুরুষ খাবে সবার আগে। এরপর যা অবশিষ্ট থাকে, তাই জুটে নারী ও শিশুর ভাগ্যে। কারণ সমাজে শ
িশু ও নারীর অবস্থান সুদৃঢ় নয়’ এ অভিমত ওয়ার্ল্ড ভেজিটেবল সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. জেকুলিন হাফসের। তিনি আরো বলেন, ‘নারী ও শিশুর খাবারে সামষ্টিক পুষ্টির অভাব থাকে। এর ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি ১৫ জন শিশুর মধ্যে পাঁচজনই মারা যায় পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই।’
খাবারে লৌহ উপাদানের অভাবে তারা রক্তশূন্যতা থেকে শুরু করে শরীরের বেড়ে ওঠা থেমে যাওয়া পর্যন্ত নানা ধরনের জটিলতায় ভোগে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের বিষয়। তা সত্ত্বেও এশীয় কৃষকেরা মুগডালের চাষে ততটা আগ্রহী নয়। কারণ মুগডাল চাষে সময় লাগে ১১০ দিন এবং এর ফলনও কম। মুগডালের খোসা খুবই ভঙ্গুর এবং সহজেই ভেঙে পড়ে।
ওয়ার্ল্ড ভেজিটেবল সেন্টার বিগত শতাব্দীর সত্তরের দশকে এই মুগডালের উন্নীত করার সম্ভাবনা খুঁজে পায়। এখন মুগডালের ব্যাপক শঙ্কর তৈরি করা হয়েছে ৫৫ দিনব্যাপী পরিপক্ব করার পদ্ধতির মাধ্যমে। এই শঙ্কর মুগবীজের ফলন ভালো, এর খোসাও তুলনামূলকভাবে শক্ত। আর এই মুগডাল ফলে গাছের একদম আগায়। এর ফলে মুগডাল সহজে সংগ্রহও করা যায়। এই উন্নীত বীজ এশিয়াজুড়ে ১৫ লাখ চাষির মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে মুগডালের উৎপাদন বেড়ে গেছে ৩৫ শতাংশ।
ডা. হাফস বলেন, ‘এই মুগডাল খুব সুস্বাদু।’ তিনি ভারতীয় সমাজে মুগডালের পাক সম্পর্কিত কর্মশালা পরিচালনা করে থাকেন। কর্মশালায় তিনি মুগডালের সম্ভাবনাময় দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমার প্রিয় খাবার হচ্ছে ধূলি মুগডাল।’
রোগ প্রতিরোধী কলা
উপসাহারীয় অঞ্চলে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে কলা ও কদলি। কলাগাছের ভেতরের অংশ। পূর্ব আফ্রিকার উচ্চভূমিও গ্রেট লেক অঞ্চলের অনেকেই এই কলা ও কদলি বিক্রি করে প্রচুর আয়ও করে। কিন্তু ২০০১ সালে উগান্ডায় বিএক্সডব্লিউ বা ‘ব্যানানা জেনথোমোনাম উইল্ট’ নামের রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তা ছড়িয়ে পড়ে কঙ্গো, কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও তাঞ্জানিয়ায়। এই রোগের পর দেখা গেল কলাগাছ থেকে বেরিয়ে আসছে প্রচুর ঙঙতঊ ব্যাকটেরিয়া, যা এ রোগের কারণ। এর ফলে মানুষ কলা খাওয়া বন্ধ করে দিলো। এতে করে অনেক কলাচাষির আয় অর্ধেক কমে যায়। উগান্ডার শত শত কলাচাষি পরিবার এর ফলে দুস্থ হয়ে পড়ে। এভাবে আফ্রিকার দেশগুলো বছরে শত শত কোটি ডলার আয় থেকে বঞ্চিত হয়।
এর সমাধান হচ্ছে ‘সুপার ব্যানানা’ নামের কলা। কোনো সাধারণ কলা বিএক্সডব্লিউ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে না। এবং আমাদের জানা কোনো বায়োকেমিক্যাল অ্যাজেন্টও এই রোগ থামাতে পারে না। ফলে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যাগ্রিকালচার’ (নাইজেরিয়াভিত্তিক) এবং ‘ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ অর্গানাইজেন ইন উগান্ডা’ ক্যাপসিকাম নামের মরিচ থেকে জেনেটিক পদার্থ নিয়ে কলার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় যা রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এটি রোগ প্রতিরোধক বলেও বেশ কার্যকর। এই ইনজেকটেড প্ল্যান্ট প্রোটিন বিএক্সডব্লিউ-এর সংস্পর্শে আসা কোষ দ্রুত ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে এই রোগ আর ছড়াতে পারে না।
বিজ্ঞানীরা এখন এ নিয়ে সরেজমিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পরীক্ষা সফল হলে আশা করা যায়, আফ্রিকার কৃষকের নতুন প্রজাতির এই কলাচাষ করতে পারবে। আর রোগ প্রতিরোধক কলা সেখানে বহু লোকের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হবে।
0 comments:
Post a Comment