WHAT'S NEW?
Loading...

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররা জানেনা পিরামিড কোথায়

 


মেহেদী হাসান



উত্তর কোরিয়ার পিয়ং ইয়ং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সবচেয়ে মেধাধী শিক্ষার্থীরা জানেনা পিরামিড, তাজমহল এবং আইফেল টাওয়ার কোথায় অবস্থিত। তাদের কোন ধারণা নেই ফেসবুক কি সে বিষয়ে। এমনকি সায়েন্স এন্ড টেকনলিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও তারা জানেনা যে, ইন্টারনেট

নামক কোন বিষয় পৃথিবীতে বিরাজ করছে ।



শুধু তাই নয় মেধাবী এ শিক্ষার্থীরা একবার ক্লাসরুমে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করল বিশ্বের সব মানুষ কোরিয়ান ভাষায় কথা বলে এটা কি আসলেই সত্যি?


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষার্থী হয়েও তারা জানেনা সর্বপ্রথম কোন দেশের মানুষ চাঁদে পা রেখেছে এবং কম্পিউটার কবে উদ্ভাবন হয়েছে।


সুকি কিম কোরিয়ান বংশোদ্ভুত একজন মার্কিন সাংবাদিক এবং লেখক। পিয়ং ইয়ং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ইংরেজি শেখানোর জন্য শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। তবে তিনি নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রেখে এ কাজ যোগাড় করেছেন। উত্তর কোরিয়ায় তার পরিচয় হল তিনি একটি খ্রিস্টান মিশনারীর সাথে যুক্ত এবং শিক্ষিকা। শিক্ষকতার আড়ালে তিনি উত্তর কোরিয়ায় অবস্থানের সময় একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন । যা তিনি করেছেন সম্পূর্ণ গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে।



সুকি কিম উত্তর কোরিয়ায় তার মিশন শেষে দেশে ফিরে দেশের অন্যতম নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এ দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী ২৭০ জন

শিক্ষার্থীকে ইংরেজি শেখানের দায়িত্ব পালন করেন। এরা শুধু যে বাছাই করা মেধাবী তাই নয় বরং রাজধানীর সবচেয়ে এলিট শ্রেণির সন্তান তারা। সুকি কিম তাদের পড়াতে গিয়ে জানলেন অন্যান্য দেশের পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী জা জানে তারা তাও জানেনা। সুকির মতে এজন্য অবশ্য তারা দায়ী নয় বরং তাদেরকে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শ এবং বিধি নিষেধের মধ্যে শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ কিছু বিষয় জানানো হচ্ছে। তাদেরকে এমন ধারণা দেয়া হয়েছে যে, তারা জানে গোটা পৃথিবীর মানুষ কোরিয়ান ভাষায় কথা বলে। তাই একদিন ক্লাসে এক ছাত্র তাকে প্রশ্ন করেছে বিশ্বের সব লোক কোরিয়ান ভাষায় কথা বলে এটা আসলে সত্যি কি-না। তাদেরকে বোঝানো হয়েছে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি কিম ইল সং এর বাইরে আর কোন দুনিয়া নেই।


সুকি কিমের মতে বাইরের দুনিয়া তো বটেই এমনকি নিজের দেশও সেখানকার মানুষের কাছে এক বিশাল অচেনা জগত। সবাই যে যেখানে আছে শুধু ততটুকু পরিমন্ডলেই বন্দী। স্বাধীনভাবে নিজ দেশেও ঘোরাফেরারও অধিকার নেই অনেকের। এমনকি টার্ম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে পরিবারের লোকজনও সাক্ষাৎ করতে পারেনা। যদিও অনেকের পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে বসবাস করে। সর্বত্র বিস্তৃত হয়ে আছে সামরিক শাসনের গ্রাস।


একদিন এক ছাত্রের বাবাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে থামিয়ে দেয়া হয়। তিনি এসেছিলেন তার ছেলের সাথে দেখা করতে কিন্তু তাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। আরেকদিন এক ছাত্রের মা তার ছেলের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল। সেদিন ছিল তার বার্থডে। তাই তাকে ২০ মিনিট দেখা করার অনুমতি দেয়া হয় ছেলের সাথে। ছেলেটি জানায় তার মা ২০ মিনিটই তার সামনে কেঁদেছে।


সুকি কিম ক্লাসের জন্য যে লেকচার শিট তৈরি করতেন তা ক্লাসে যাবার আগে একদল লোক প্রতিদিন পরীক্ষা করে দেখত।


তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি মাত্র টিভি চ্যানেল এবং একটি মাত্র পত্রিকা। টিভি এবং পত্রিকা দুটিই দেশটির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট কিম ইল সং বিষয়ে। তাদের একমাত্র জগৎ হল কিম ইল সং। কিম ইল সং নেই এমন যেকোন দুনিয়া তাদের জন্য নিষিদ্ধ। এমনকি কঠিন শীতের রাতেও রাতভর ছয়জন করে শিক্ষার্থীকে মার্শাল আর্টের পোশাক পরে পালাকরে পাহারা দিতে হয় কিম ইল সং স্টাডি রুম। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনিই একমাত্র শাশ্বত বিষয়। সব শিক্ষার্থীদের পোশাকের সাথে কিম ইল সংয়ের প্রতীক।



শিক্ষকতার আড়ালে সুকি কিম অতি গোপনীয়তার সাথে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন। কাজ করেছেন সেদেশের ওপর একটি বই লেখার বিষয়ে। এজন্য প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় উঠে তাকে এ বিষয়ে কাজ করতে হত। আর সব কাজ ইউএসবি স্টিকে পাঠানোর পর তার কাজের সমস্ত প্রমান ল্যাপটপ থেকে মুছে ফেলতে হত। এভাবেই তিনি লিখেছেন ‘দেয়ার ইজ নো আস উইদাউট ইউ’ নামক বই। আর এ কাজে কোরিয়ায় ধরা পড়লে গুপ্তচারবত্তির দায়ে ৪০ বছরের এই নারীর করুন পরিণতি ছিল অবধারিত।


 

0 comments:

Post a Comment