WHAT'S NEW?
Loading...

আন্দোলন থেকে সরে আসবে না বিএনপি


মঈন উদ্দিন খান


 


বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের টানা হরতাল-অবরোধ দুই মাস পেরিয়ে গেছে। বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের চেষ্টা চলছে সর্বত্র। রক্ত ঝরছে দেশের বিভিন্ন জনপদে। হত্যা, খুন, গুম ও ক্রসফায়ারে ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশজুড়ে। জীবন-জীবিকা

হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থনীতিতে নেমেছে ধস। রাজধানীতে নাগরিক জীবন কাটছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। রাতের ঢাকা ভীতিকর রূপ নিয়েছে। ঠিক কবে নাগাদ দুঃসহ এই পরিস্থতির উত্তরণ ঘটবে, তা যেন অনিশ্চিত।



দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ চলছে। এই অবরোধের পাশাপাশি সারা দেশে হরতালও চলছে সমানতালে। দুই মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা দেশে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে ১১৬ জন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই সাধারণ ও নিরীহ মানুষ। আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছেন অথবা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।



জঙ্গি কিংবা নাশকতার ধুয়া তুলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে কোনো ধরনের আলোচনায় যেতে এখনো রাজি নয়। অন্য দিকে বিএনপি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছু না হটার ঘোষণা দিয়েছে। যত দিন প্রয়োজন, তত দিন হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যেতে অনড় এই জোট।



উভয় পক্ষের এমন অনড় অবস্থানের কারণে সঙ্কট নিরসনে প্রধান দুতিয়ালির ভূমিকায় চলে এসেছে আন্তর্জাতিক মহল। সাম্প্রতিক সময়ে এর মাত্রা বেড়ে গেছে। জাতিসঙ্ঘ থেকে সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানানো হচ্ছে বারবার। সর্বশেষ জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার চলমান অচলবস্থা নিরসনের উপায় খুঁজে করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সঙ্কট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রকে আরো উদ্যোগী হতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশী ককাসের ১১ কংগ্রেসম্যান। সরকারকে অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া দ্রুত নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে বলেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হুগো সোয়ার।


এর আগে চলমান সঙ্কট উত্তরণে সংলাপে বসতে দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন। বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টিও জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। চলমান সঙ্কট নিরসনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার-সংক্রান্ত সংসদীয় একটি দল ফেব্র“য়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন।



ঢাকায় নিযুক্ত প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকেরা সঙ্কট নিরসনে ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছেন। নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্্রদূত বার্নিকাট দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এই তৎপরতা আরো গতি পেয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ১৬টি দেশের কূটনীতিকেরা প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। নাটকীয়ভাবে গত ৩ মার্চ এসব দেশের কূটনীতিক দেখা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে। খালেদা জিয়ার সাথে কূটনীতিকদের ওই বৈঠক সরকারের অনেক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে।



কূটনৈতিক মহল কোন প্রক্রিয়ায় সঙ্কটের সমাধান হতে পারে, তা নিয়ে উভয় দলের সাথে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে এখন নিয়মিত কথা বলছেন। কোন দলের কী চাওয়া, তা বোঝার চেষ্টা করছেন তারা। কূটনীতিক পাড়ায় এ নিয়ে প্রতিদিনই বৈঠক হচ্ছে।



কূটনীতিক তৎপরতাকে স্বাগত জানাচ্ছে বিএনপি। সঙ্কট দ্রুত সমাধান হবে, এমন আশাবাদীও তারা। দলটির নেতারা মনে করছেন, চলমান আন্দোলন সফলতার দিকে যাচ্ছে। শীর্ষ নেতাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা, সিনিয়র নেতাদের কারাগারে নিক্ষেপ, হামলা-মামলা, গুম, খুন, ক্রসফায়ার, ট্রাক-বাসের চাপায় মেরে ফেলার হুমকির মধ্যেও আন্দোলন দুই মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। সারা দেশ থেকে এখন ঢাকা বিচ্ছিন্ন। এত দিন রাজপথে টিকে থাকাটাই প্রথম সফলতা।


এ ছাড়া সুশীলসমাজ ও বহির্বিশ্বের সমর্থন সফলতার আরেক দিক। নেতারা বলছেন, তাদের এ আন্দোলন শুরুর মূল লক্ষ্য ছিল নতুন নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা। দেশ-বিদেশে ইতোমধ্যে এ দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে। কূটনৈতিক মহলের কাছে এটা এখন পরিষ্কার যে, ৫ জানুয়ারি একটি বিতর্কিত নির্বাচনের পরেও সরকার সংলাপে আন্তরিক নয়। আর এ কারণেই আন্দোলনে থাকতে বাধ্য হচ্ছে বিএনপি।



কূটনীতিক তৎপরতায় আশাবাদী হয়ে কর্মসূচি থেকে সরছে না ২০ দল। দলের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, সরকার মনে করেছিল, দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ায় বিএনপি নিজে থেকেই কর্মসূচির ইতি টানবে, কিন্তু তা বাস্তবে হয়নি। বিএনপি জোট পিছু হটবে না, বরং নতুন কৌশলে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। প্রয়োজনে মার্চজুড়ে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি চলবে। আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করার কথাও ভাবা হচ্ছে। অবরোধ রেখে ঢাকায় বড় ধরনের একটি শোডাউন করার চিন্তাভাবনা চলছে।



ঢাকায় ২০ দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে শুরু করেছেন। সারা দেশেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের এখনো ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটেনি। নানামুখী প্রতিকূলতা এড়িয়ে মাঠে থেকে আন্দোলনকে সফলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।



বিএনপি নেতারা এ-ও মনে করছেন, সরকার পিছু হটতে শুরু করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেও তাকে গ্রেফতার করার সাহস পাচ্ছে না। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে দেশজুড়ে আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়বে, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।



গ্রেফতার কিংবা সরকারের নানামুখী চাপে ন্যূনতম চিন্তিত নন খালেদা জিয়া। আন্দোলনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে অনড় রয়েছেন তিনি। দুই মাসের অধিক সময় ধরে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। আন্দোলনের সব নির্দেশনা আসছে তার কাছ থেকেই। তৃণমূল নেতাদের তিনি সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলছেন, কাক্সিক্ষত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।


 

0 comments:

Post a Comment