WHAT'S NEW?
Loading...

সামান্য পরিবর্তনেই সুস্থ থাকতে পারেন

 


জীবনযাত্রায় সামান্য একটু পরিবর্তন এনেই আপনি রোগবালাই অনেক কমিয়ে আনতে পারেন। আর এসব পরিবর্তনে আপনার কোনোই সমস্যা হবে না। অথচ অনেক রোগ আপনাকে স্পর্শই করবে না। রিডার্স ডাইজেস্ট থেকে এ ধরনের কয়েকটি পরিবর্তনের কথা জানাচ্ছেন হাসান শরীফ


 


নাশতা না করলে কী হবে?
আপনি যখন দীর্ঘ রাতের পর ঘুম থেকে জাগেন, তখন আপনার দেহ সম্ভবত ১২ ঘণ্টা কোনো ধরনের খাবার পায়নি। এর মানে হলো আপনার জ্বালানি প্রয়োজন। আরো স্পষ্টভাবে বললে বলতে হয়, আপনার রক্তধারায় সম্ভবত গ্লুকোজের স্বল্পতা তৈরি হয়েছে। নাশতা না খাওয়া মানে আপনি স্বল্প ব্লাডসুগার নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন, অথচ আপনার মস্তিষ্কের প্রয়োজন ব্লাডসুগারের, তার কাজ ঠিকমতো চালানোর জন্য। ফলে আপনার

নাশতা না খাওয়া মানে মস্তিষ্ককে পুরোদমে কাজ করতে দিচ্ছে না। এতে করে আপনার বমি বমি ভাব হতে পারে, নার্ভাস হয়ে পড়তে পারেন কিংবা বোধশক্তি কমে যেতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব স্কুলে শিশু নাশতা করে, তাদের স্মরণশক্তি অনেক ভালো, তাদের যেসব ক্লাসমেট করে না, তাদের চেয়ে বেশি শেখে।
অ্যান্ডোক্রিনোলজিস্ট (অন্তঃক্ষার গ্রন্থির রোগ ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ) ডা: সুমা ড্রনাভেলির মতে, ‘সকালের নাশতা বাকি দিনের ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।’ অনেক লোক আছে, যারা ক্যালরি কমানোর জন্য ব্রেকফাস্ট মিস করে, কিন্তু তারা আবার দুপুর বা রাতের খাবার খায় একটু বেশি। তাদের বেশির ভাগই আবার রাতে বা দুপুরে চর্বিজাতীয় খাবার খায়। ফলে কোনো লাভই হয় না, ক্ষতির মাত্রাই বেশি থাকে।
সকালের নাশতা মিসকারীদের মধ্যে দুই বেলার মাঝখানে জাঙ্কফুড খাবার প্রবণতাও সৃষ্টি হয়। ভেনিজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ওজনযুক্ত যেসব নারী ডায়েটিং করছেন, তারা সকালে ভারী নাশতা করলে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশি সুফল পান। এতে প্রমাণিত হয়, নাশতা করলে কেবল ওজন হ্রাসই পায় না, বরং সেই সাথে ব্লাডসুগারও কাক্সিক্ষত মাত্রায় থাকে।
তা ছাড়া সকালের নাশতা করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস সৃষ্টিকারী ইনস্যুলিন প্রতিরোধের ক্ষমতা ৫০ ভাগ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
চকোলেট খেলে কী হয়?
সব ধরনের মিষ্টির প্রধান উপাদান হলো চিনি। যখনই আপনি চকোলেট, ক্যান্ডি ইত্যাদি খাবেন, সাথে সাথে আপনার ব্লাডসুগার (অনেক সময় বিপজ্জনক মাত্রায়) বেড়ে যাবে। অবশ্য চকোলেটের ব্লাডসুগার প্রতিক্রিয়া খুব ক্ষতিকর নয়। চকোলেটে থাকা চর্বি হজমপ্রক্রিয়াকে কিছুটা মন্থর করে দেয়। এর মানে হলো, চকোলেটের চিনি ব্লাডসুগার কিছুটা বাড়ালেও
সাদা রুটি, পাস্তা বা আলু খেলে যেমনটা বাড়ে তেমন নয়।

কিন্তু তারপরও চকোলেটে অনেক ক্ষতি হয়। প্রথমেই বলা যায়, মিল্ক চকোলেটের কথা। এ ধরনের চকোলেটই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ধমনী প্রতিবন্ধক ঘন চর্বি থাকে। এটাও সত্যি, এসব চর্বির কিছু অংশকে বলে স্টেয়ারিক এসিড, যা কলেস্টেরল বাড়তে দেয় না। কিন্তু বেশি বেশি চর্বি মানে বেশি বেশি ক্যালরি। আপনি যত বেশি চকোলেট খাবেন, তত বেশি আপনার পেট ফুলবে, তবে পুষ্টি পাবেন তত কম। অবশ্য ডার্ক চকোলেটে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা রক্তচাপ কমায়। দিনে ছোট্ট এক টুকরা খেলে বা সপ্তাহে একটি ছোট একটাবার মুখে পুরলেও ওজন কিছুটা বাড়বে।
এটা সত্যি, চকোলেট দেখলেই লোভ হয়। মাঝে মাঝে চেখে দেখতে পারেন, বেশি হলেই বিপদ। যত বেশি হবে, আপনার কোমরের মাপও তার সাথে পাল্লা দেবে।



আপেলে লাভ কী?
রসাল আপেলে যত কামড় বসাবেন, আপনি তত পুষ্টি পাবেন, আপনার হজমক্ষমতা বাড়বে, ক্ষুধা কমবে, হৃৎপিণ্ড সুস্থ হবে। আপেলের যে উপাদানটি সবচেয়ে উপকারী সেটি হচ্ছে আঁশ, আরো বিশেষভাবে বললে বলতে হয় দ্রবণযোগ্য আঁশ। ইসুবগুলের ভুসিজাতীয় সব খাবারই আপনার জন্য ভালো। তবে দ্রবণযোগ্য আঁশ সেই সাথে আপনার ব্লাডসুগারও নিয়ন্ত্রণ করে।
আপেলে কোয়ারসেটিন নামে এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এই উপাদানটি (সবুজ চা ও পেঁয়াজেও আছে) হাঁপানি (অ্যাজমা), হৃদরোগ এমনকি কিছু কিছু ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, আপেল ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রমণ প্রশমন করে। কোনো কোনো সমীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, দিনে একটি করে আপেল খেলে ওজন কমাতে সহায়ক হয়। আপেল মজাদারও। তাই শুরু করুন আজ থেকে। [তবে বাংলাদেশের ফরমালিনযুক্ত আপেল থেকে সাবধান। ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই, এমন আপেল শুরু করুন আজ থেকেই।]



সারা দিন বসে থাকলে ক্ষতি কী?
সারা দিন সোফায় বসে অলসভাবে কাটানোকে অনেকে সময়ের অপচয় ভাবতে পারেন। তবে অপচয় হোক আর না হোক, আপনার দেহের ভেতরে কিন্তু বড় ধরনের ওলট-পালট ঘটে যাবে। আপনার রক্তধারায় থাকা গ্লুকোজ নানা গোলমাল পাকাতে থাকে। হাঁটাহাঁটি বা অন্য কোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করলে পেশিকোষগুলো গ্লুকোজ শুষে নিয়ে জ্বালানি তৈরি করে। কোনো দিন যদি আপনি পেশিগুলোতে যথেষ্ট কাজ না দেন, তবে গ্লুকোজ অব্যবহৃত হয়ে থাকবে। দীর্ঘ সময় ধরে এমনটা হতে থাকলে দু’টি বড় ধরনের ক্ষতি হবে : প্রথমত, অব্যবহৃত গ্লুকোজ রূপান্তরিত হবে চর্বিতে এবং দ্বিতীয়ত, রক্তের মধ্যে থাকা গ্লুকোজ এজিই নামের বিপজ্জনক যৌগ গঠন করতে পারে, যা স্নায়ু ও রক্তকোষগুলোর ক্ষতি করতে করে। এ কারণেই উচ্চমাত্রার ব্লাডসুগারের কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা কিডনি রোগ, স্নায়ু ক্ষতি ও অন্ধত্বের দিকে এগোতে থাকে। বাইরে হাঁটাহাঁটি করলে এসব বিপদ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। ব্যায়াম নির্ভরযোগ্য একটি চর্বিনাশক এবং আরো অনেক উপকারের পাশাপাশি এ থেকে এজিইর মাত্রা কমানো যায়।
আর বসে থাকা মানে ব্লাডসুগার বাড়ানো, ওজন বৃদ্ধি করা এবং আরো নানা সমস্যা সৃষ্টি করা।



রাগ পুষে রাখলে কী হবে?
মাঝে মাঝে রাগলে ক্ষতি নেই। এটা স্বাভাবিক অভিব্যক্তি। তবে রাগ পুষে রাখা আরেকটি ব্যাপার। আপনার স্বাস্থ্যের জন্য তা অত্যন্ত ক্ষতিকর। ওজন বাড়া, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার মতো ঝুঁকি বাড়ে এতে। রাগ বা ক্রোধ এক ধরনের আবেগগত চাপ। রাগের কারণে অ্যাড্রেনালিন ও অন্যান্য চাপ-সংশ্লিষ্ট হরমোন নিঃসৃত হয়। এসব হরমোনের কারণে ব্লাডসুগার বাড়ে। এ ছাড়াও চাপের কারণে বেশি বেশি জাঙ্কফুড খাওয়ার মতো বদঅভ্যাসও সৃষ্টি হতে পারে।
সারা দিন আপনার রাগ পুষে রাখা মানে আপনার হৃৎপিণ্ডকেও ক্ষতি করা। ইয়েল ইউনিভার্সিটির এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব লোক সহজেই রেগে যায়, তাদের হৃদরোগ সৃষ্টিকারী অ্যান্ডোথিলিন নামের একটি উপাদানের নিঃসরণ বাড়ে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, রাগের ফলে হৃদকম্পন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, যা নানা জটিলতার সৃষ্টি করে।
সারা দিন রাগ পুষে রাখাটা মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই যখন দেখবেন, আপনার রাগ পড়ছে না, তখন কোনো না কোনো উপায় বের করুন ঠাণ্ডা হতে। আপনি লিখতে পারেন কিংবা বন্ধু বা স্বজনদের সাথে কথা বলতে পারেন। কিংবা একটু ঘুরে আসুন। কিছু একটা করতে থাকুন, পথ পাবেনই।


 


সারা দিন খুশি থাকলে লাভ কী?
আপনি সারাটা দিন হাসিখুশি থাকলে আপনার দেহ শান্ত থাকে, নিজের দিকে মনোযোগ দেয়ার অবকাশ পায়। যেহেতু আপনি শান্ত আছেন, তাই চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন নিঃসৃত হওয়ার কোনো কারণ থাকে না।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হাসিখুশি লোকেরা সংক্রমণ রোগবালাইয়েও কম আক্রান্ত হয়। ভাইরাস আক্রমণ করতে এলে দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পুরো শক্তি নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করার সুযোগ পায়।
অন্যান্য সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব লোক আশাবাদী, হাসিখুশি থাকে তারা ঠিকমতো খাবে, ব্যায়াম করবে, এমন সম্ভাবনা প্রবল থাকে। ফলে তাদের ব্লাডসুগার বাড়ারও আশঙ্কা থাকে না।
পুরনো দিনের প্রবাদ বাক্যটির কথা মনে করুন। গোমড়া মুখের চেয়ে হাসি অনেক উপকারী। হাসলে অনেক পেশির ব্যায়াম হয়ে যায়। হাসলে উচ্চ ব্লাডসুগারও ভালোভাবে প্রতিরোধ করা যায়।


 


মাত্র ৫ ঘণ্টা ঘুমালে চলবে?
খুব কম ঘুমানো মানে আপনার দেহের কর্মক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়া। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঘুমের কারণে লেপটিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়। আর এই হরমোন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রিত রাখে। এর মানে হলো, যত কম ঘুমাবেন, লেপটিন নিঃসৃত হবে কম এবং আপনি বেশি বেশি খাবেন। ঘুম কম হলে আপনার দেহ থেকে চাপ সৃষ্টিকারী হরমোনও বাড়ে, আপনার রক্তে বেশি গ্লুকোজ পাঠায়।
এখানেই শেষ নয়। কম ঘুমের কারণে দেহে রোগ প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী রাসায়নিক যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদিত হতে পারে না। ২০০৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা দিনে সাত ঘণ্টার কম ঘুমায়, তাদের ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
আরো কথা আছে। অ্যালার্ম ঘড়ির শব্দে ঘুম ভাঙা মানে আপনি গভীর নিদ্রা থেকে হঠাৎ করে জাগলেন এবং সেটা খিটখিটে মেজাজে। দিন যত গড়াবে, এমন সম্ভাবনাই বাড়বে যে, আপনি নিস্তেজ হয়ে পড়বেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব লোক পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়, তারা অনেক দ্রুত নতুন নতুন তথ্য অবগত হতে পারে, তাদের স্মৃতিশক্তিও ভালো থাকে। স্বল্প ঘুম আপনার প্রতিক্রিয়ার গতিও মন্থর করে দেয়।
অল্প কিছুসংখ্যক লোকের অনেক কম ঘুমালেও চলে। সাধারণ লোকের প্রতি রাতে ঘুমের প্রয়োজন সাত থেকে আট ঘণ্টা।


 

0 comments:

Post a Comment