সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
‘কালো মেঘের আড়ালে সোনালি রেখা’ দেখতে চান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এই আশাবাদ ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে ‘আশি’ পেরিয়ে যাওয়া এই অর্থমন্ত্রী তার ঢাউস সাউজের বাজেট বক্তৃতায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বপ্ন শুনিয়েছেন জাতিকে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী যতই কালো মেঘের ওপর সোনালি রেখা দেখার আকাক্সা ব্যক্ত করেন না কেন, জনগণ কিন্তু এই বাজেট থেকে ‘অন্ধকা
জনগণের সমর্থন প্রায় শূন্যের কোঠায় ছুঁই ছুঁই অবস্থা। তাই ‘ক্ষমতায়’ টিকে থাকতে হলে ভর করতে হবে প্রশাসনের ওপর। সে কথা তিনি হারে হারে টের পেয়েছেন। তাই আগামী অর্থবছর থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর আশ্বাস বাণী শুনিয়েছেন তিনি। সমাজের বসবাসরত বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রতি বিন্দুমাত্র ‘তোয়াক্কা’ নেই, কিন্তু একটি অংশকে তিনি আপন করে নিয়েছেন। তাদের জন্য বাজেটে প্রস্তাব করেছেন আয়কর রেয়াতের কথা। বলেছেন, অবসরভোগীদের সুবিধা দেয়ার জন্য পেনশনার সঞ্চয় স্কিমের সর্বাধিক পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগের ওপর প্রদেয় সুদের ওপর কোনো কর কাটা হবে না। এর কারণটি কিন্তু সহজেই অনুমেয়, এই অবসরভোগীদের ৯০ শতাংশ কিন্তু এক সময় সরকারি কাজে নিয়োজিত ছিল। তাদের সুবিধাটি দেয়া হয়েছে, আর সুবিধা দেয়া হয়েছে ওয়েজ আর্নার্স স্কিমে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগের ওপরও। কিন্তু অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের ওপর কোনো সুবিধা দেয়া হয়নি। অর্থমন্ত্রী সমাজে বৈষম্য দূর করতে চান, কিন্তু এখানে বৈষম্য থেকে গেল পুরোপুরি!
আরো আছে, নতুন যারা কোম্পানি করবেন বা যেসব কোম্পানি শেয়ারবাজারে নেই তাদের করপোরেট কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে আড়াই শতাংশ। কৃষি খাতে বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত আয়ের সীমাও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে চার গুণ। তৈরী পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের খুশি রাখতে হবে। তাই তাদের দেয়া বিদ্যমান সুবিধা আগামী ৩০ জুন ২০১৫ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষকে ‘খুশি’ রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ১৮টিরও বেশি পণ্য লোকাল এলসি করের আওতার বাইরে রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একই সাথে এলসির কমিশন করও কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
অন্য দিকে এবারের বাজেটে কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হয়েছে ব্যাপকভাবে। উপজেলা-জেলা পর্যায়েও এবার করের আওতা সম্প্রসারিত হচ্ছে। নতুন নতুন খাতকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও করের আওতায় আনা হয়েছে। আগামী বছর থেকে ভ্যাটের আওতা আরো বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে এবার বাড়তি কর আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়ির মালিকদের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকার বেশি বাড়িভাড়া আদায়ের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে। ব্যাংকে জমা বাড়িভাড়া থেকেই সরকার আনুপাতিক হারে কর কেটে রাখবে। অনগ্রসর এলাকার যেসব কোম্পানি কর সুবিধা পায় না সেসব কোম্পানিকে করের আওতায় আনা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণ করে এমন শিল্পপণ্যের ওপর ১ শতাংশ হারে গ্রিন ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। বিড়ি-সিগারেটের ওপর নিয়মিত শুল্কের বাইরে ১ শতাংশ হারে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। বিভিন্ন খাতে এবার ভ্যাটের হারও বাড়ানো হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্য আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব মিলে এবারের বাজেটে সারা দেশে কর ও ভ্যাটের জাল ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে আগামী বছর দ্রব্যমূল্য কশাঘাতে জর্জরিত হতে হবে সাধারণ মানুষদের।
এসব বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে গত ৫ জুন অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকারটি নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। বিশাল এই বাজেটে ঘাটতিই ধরা হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। কিভাবে এই ঘাটতি মোকাবেলা করা হবে। ঘাটতি মোকাবেলায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৩ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকাই নেয়া হবে ব্যাংক থেকে। অর্থাৎ এই পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাকি ১২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা নেয়া হবে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে। ঘাটতি মোকাবেলায় বিদেশী উৎস থেকে অর্থ নেয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। যদি এই পরিমাণ অর্থ না পাওয়া যায় তবে ব্যাংক থেকে আরো ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানোর কাজটি করতে হবে। যার অবশ্যম্ভাবী ফলটি হচ্ছেÑ দেশের ‘ইঞ্জিন’ হিসেবে বিবেচিত বেসরকারি খাত ঋণ বঞ্চনার শিকার হবে।
বাজেট বক্তৃতায় অনেক কিছুই অস্পষ্ট
‘অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় সম্ভাবনাময় আগামী পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতায় অনেক কিছুই ছিল অস্পষ্ট। মোট ১৬৩ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতায় আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৩ শতাংশ ধরা হলেও মূল্যস্ফীতি কত হবে তা বলা হয়নি। শুধু আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে থাকবে।
শুভঙ্করের ফাঁকি
বাজেটে রয়েছে অনেক গোঁজামিল, যাকে শুভঙ্কারের ফাঁকি হিসেবে ধরা যেতে পারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথাই ধরা যাক। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ হতে হবে জিডিপির অংশ হিসেবে ৩৪ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে যা রয়েছে ২৯ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে কী এমন জাদুকরী ঘটনা ঘটবে যাতে করে বিনিয়োগ বেড়ে যাবে ৫ শতাংশ। অতীতে যা হয়নি। কিন্তু অর্থমন্ত্রী তার কোনো ব্যাখ্যাই করেনিÑ কেন আগামী বছর ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, এই অঙ্কের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে আগামী অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এত বিশাল পরিমাণ বিনিয়োগ এক বছরে করা সম্ভব কি না তা কি অর্থমন্ত্রী জানেন। অতীতে কখনোই বাংলাদেশে এক বছরে এই পরিমাণ বিনিয়োগ হয়নি।
বৈষম্য আরো বাড়বে
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার শেষ তিনটি লাইন ছিল এভাবে,‘উত্তর প্রজন্মের জন্য রেখে যাবো এমন এক দেশ, যেখানে থাকবে না দারিদ্র্য আর বৈষম্য, অনৈক্যের অপছায়া, আর অপশাসনের নিস্পেষণ।’ কিন্তু বাস্তবে আমার কী দেখতে পাচ্ছি, অর্থমন্ত্রী বাজেটে অবসরভোগী মানুষ ও বিদেশী ওয়েজ আর্নারদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও ওয়েজ আর্নার্স ডেভলেপমেন্ট বন্ড ক্রয়ে পাঁ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ হতে অর্জিত সুদ আয়কর মুক্ত রাখার প্রস্তাব করছি’। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখন যারা পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন তার শতকরা ৯০ শতাংশই হচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের সুবিধা দেয়ার জন্য বর্তমান বাজেটে এই কর রেয়াত দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের সঞ্চয় ¯িীমে আরো চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। তাদের জন্য কিন্তু সুবিধা দেয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে বৈষম্য কমানোর চেয়ে বাজেটে বৈষম্য বৃদ্ধি করার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পিপিপি আইনই হয়নি, তবুও ৩৪ প্রকল্প
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) একটি জনপ্রিয় শব্দ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে এর সাহায্যে। এ নিয়ে বিস্তর কথাও হয়েছে ছয়-সাত বছর ধরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ জন্য কোনো পিপিপি আইনই তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তাতে কী, এর আওতায় প্রকল্প নিতে তো আর দোষ নেই। হয়েছেও তো তাই, এবার বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে পিপিপির আওতায় ৩৪টি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পগুলোর বিপরীতে ‘ঢাউস’ বরাদ্দও রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ বা কী হবে, কবে নাগাদ প্রকল্পগুলো শেষ হবে তার কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
মহিলাদের আয়করমুক্ত সীমা বৃদ্ধি
আগামী অর্থবছরে মহিলা, প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আয়করমুক্ত সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সাধারণ করদাতাদের আয়করমুক্ত সীমা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সাধারণ করদাতাদের আয়করমুক্ত সীমা দুই লাখ ২০ হাজার অপরিবর্তিত থাকছে। তবে মহিলা ও ৬০ বছর ঊর্ধ্ব করদাতাদের বিদ্যমান আয়করমুক্ত সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিবন্ধী করদাতার আয়করমুক্ত সীমা বিদ্যমান তিন লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারদের করমুক্ত সীমা দুই লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করা হয়েছে।
একটি করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে
নন-পাবলিকলি ট্রেডেড (শেয়ারবাজারে নেই) কোম্পানি করপোরেট কর বর্তমানে রয়েছে সাড়ে ৩৭ শতাংশ। এটি কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানি ও অংশীদার ব্যবসার টার্নওভারের ওপর প্রদেয় ন্যূনতম করের হার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। আর অন্যান্য কোম্পানির কর হার অপরিবর্তিত রাখার কথা বলা হয়েছে বাজেটে।
বাজেট ব্যয়ে শীর্ষে রয়েছে সুদ পরিশোধ
আগামী অর্থবছরে অনুন্নয়ন বাজেটের আকার ধরা হয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৩১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ে ১৮ দশমিক চার শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ে দ্বিতীয় বৃহৎ খাতে রয়েছে বেতনভাতা। এখানে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৮ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন বাজেটের ১৭ শতাংশ।
উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা
আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। আদায়ের ব্যর্থতার কারণে পরে তা সংশোধন করে করা হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে কর থেকেই আদায়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে রাজস্ব আদায় ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা। আদায় ব্যর্থতার কারণে তা সংশোধন করে করা হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে আদায় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি ২৭ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে আরো ছয় হাজার ২০৬ কোটি টাকা।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)
আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। তবে এর সাথে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বাজেট ধরলে তা বেড়ে হবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
বিদেশে ঋণ : প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশী নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়েছে উচ্চাভিলাষী। এ খাত থেকে আসবে মনে করা হচ্ছে ১৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ১৪ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। তবে বিদেশী ঋণ আশানুরূপ না পাওয়ায় ঋণপ্রাপ্তি সংশোধন করে করা হয় ১২ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ কী পূরুণ হবে?
বাজেট বক্তৃতার শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘অনেকেই জানেন যে, আমি কর্মব্যস্ত আশি বছর অতিক্রম করেছি। অর্জন ও ব্যর্থতার দোলাচলে আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে আমি কখনো আশাবাদ ব্যক্ত করতে এবং রাখতে কার্পণ্য করিনি। আমি আগেও বলেছি যে, কালো মেঘের আড়ালে আমি সোনালি রেখা দেখতে পাই। বাংলাদেশের অপরিমেয় সম্ভাবনায় এ দেশের তরুণদের মতো আমিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই অপরিমেয় সম্ভাবনার স্বার্থে আমরা চাই একটি অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র। বাংলাদেশের জনগণও প্রতিটি কঠিন সময়ে এই আদর্শে বিশ্বাস রেখে এগিয়ে গেছেন এবং সাফল্য অর্জন করেছেন। এবারো তার কোনো হেরফের হবে বলে আমি মনে করি না। সেই বিশ্বাসে অটুট থেকে আমি আহ্বান জানাব আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়ন এবং মঙ্গলের স্বার্থে সব রকম সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে। প্রতিবাদ ও সমালোচনা অবশ্যই হবে, কিন্তু সেজন্য কোনো সহিংস পথ অবলম্বন করা চলবে না। একটি জাগ্রত ও উদ্বুদ্ধ জাতি কোনোমতেই হত্যা এবং ভাঙচুরের রাস্তা সহ্য করবে না।’
এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, অর্থমন্ত্রীর এ আশাবাদ পূরণে (তার) সরকার কতখানি আন্তরিক। কারণ প্রতিবাদ ও সমালোচনার জন্য মানুষ তো রাস্তায় শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়াতেই পারছে না।
0 comments:
Post a Comment