WHAT'S NEW?
Loading...

ইঁদুরেরা অপেক্ষায় আছে


জুবাইদা গুলশান আরা


বাগানটা চমৎকার ছিল। বার্ষিক উৎসবের আয়োজন ছিল।
অকস্মাৎ মৃত্যু এসে হানা দিলো।
আলেক মিয়া, তোফাজ্জল, মোস্তাফা, জলিল... সব ফিটফাট চৌকস লড়াকু মানুষ কেমন এক জাদুমন্ত্রে মেতে উঠল দারুণ হোলিখেলায়। বিচিত্র স্লোগান উঠল ‘প্রতিশোধ চাই, আমাদের দাবি মানতে হবে’।
- কোম্পানি... সালাম দাও!
- আগে চলো ও...।



না। এসব মার্জিত পরিচিত ঘোষণার জায়গায় শব্দ উঠল কড়াৎ কড়াৎ করে। অফিসার সিপাহিকর্মী... সবাই যেন ভূমিকম্পের মাঝখানে। দাবানলে পুড়ছে সব আনন্দ। রক্তস্রোতে মৃত্যুর গন্ধ। কেউ

জানে না কেন এত ক্রোধ, কেন এত মৃত্যু...। বড় বড় গর্তে মানুষের দেহাবশেষ। আগুনের লেলিহান শিখায় কেবলই মৃত্যু : ধ্বংস আর হত্যাযজ্ঞ।
প্রচণ্ড মৃত্যুর মারণোৎসবের পরে নেমে আসে রহস্যময় নৈশব্দ।
- আলেক মিয়া, ঘুমাইয়া গেছ, না জাইগ্যা আছ?
খুট খুট করে শব্দ করে ইঁদুরটা। বন্দিশালায় অল্প একটা খুপরিঘরের মধ্যে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। অথচ চাকরিরত অবস্থায় বেশ ভালোই ছিল তারা। আর এখন? প্রতিদিন একই প্রশ্ন, একই উত্তর দেয়ার পালা। মাঝে মধ্যে ভীষণ অস্থির লাগে। ডিসিপ্লিন। কল ইন, কল আউট। দেশ ও জাতির জন্য জান কোরবান করে দেয় এক একটি দল। যেখান দিয়ে মানুষ কাজে যায়, সবাই এক ধরনের মুগ্ধতা নিয়ে তাদের দেখে। তা ব্যাপারটা ভালোই। ডিসিপ্লিনারি ফোর্স, এ দেশের গর্ব। সবার চোখে মমতা আর ভক্তি। কিন্তু গর্তের ইঁদুরটা ওরকম বাঁকা চোখে তাকিয়ে কী বলে গেল?
ও হ্যাঁ, বলে গেল ঘুমাইছ আলেক মিয়া? 



-অয় একলা নাকি? সারা রাইত ঘুমায় না?’ বিড়ালটা হাই তুলে সামনের পা-টা টানটান করে আড়মোড়া ভাঙে। মুখটা হাসি হাসি করে উত্তরের অপেক্ষা করে। কিন্তু আলেক মিয়া, কালু, রইস জমাদ্দার বা হেলালউদ্দিন কেউ জবাব দেয় না। নিজেদের ভাবনায় ডুবে থাকে তারা। হেলাল মৃদু গলায় বলে, মউতে ধরছিল আমাগো। নইলে আমাগো অভাব কী আছিল।
 কও দেহি? কী চাইছিলা? মানুষগুলারে মারছিলা কী পাওয়ার জইন্য?
কী চাইছিলাম?...হ! তাই তো! দিনের দিন ভাইবা পাই না। পাশে বসে থাকা তন্দ্রাচ্ছন্ন কসিমদ্দি মিয়া বিড়বিড় করেÑ লাল কাল্লা উড়াইয়া আমাগো কইলো, আমাগো প্রতি অন্যায় হইতাছে! আমাগো একটা কিছু করণ লাগে। আর তোমরা হগলে ঝাঁপ দিয়া পড়লা। আমার তো ডিউটিই আছিল না, বিছানায় ঘুমাইছিলাম। আগের রাইত

ে নাইট ডিউটি করছি, কাহিল লাগতে আছিল। আমারে টাইন্যা উডাইলো। কইলো, এইডা আমাগো সগলের ন্যায়সঙ্গত দাবি। সবাই এক লগে যাওন লাগবো। মানুষ খুন করণ লাগবো। এইডা না কইয়া, আমারে জোরে ধইরা লইয়া গেল হ্যারা।’ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কসিমদ্দি। কসিমদ্দির পিঠে হাত রাখে বিল্লাল। সান্ত্বনা দিয়ে বলে যা করছ সকলের কথা ভাইব্যা করছ। 



আমি ভাবি নাই। আমি কিছু চিন্তা করি নাই। আমি ধাক্কা খাইয়া অস্ত্র তুলছি।
আরে (যা কালাইয়া)’ আচমকা উত্তেজিত হয়ে ওঠে সোহরাব নামের মধ্যবয়সী লোকটা। বলে ওঠে দুইডা ভালো খাওন, মা-বাপেরে আরাম দেওন, বউ-পোলাপান সুখে থাকবো। এইডা চাইছি। বেতন বাড়ে না, খালি নিয়ম-কানুন মাইন্যা চলার হুকুম। আমাগো রাগ নাই?



 দেহেন না, আবার নাম দিছে কী, সিকিউরিটি ফোর্স। বর্ষা, বইন্যা, গর্কির মধ্যে যাইবো কারা? মানুষ বাঁচাইতে যাইতে হইবো, কারা যাইবো? এই কপাল পোড়া সিকিউরিটি ফোর্স। আর বিদেশ ঘুরবো কারা? বড় বড় কামান লইয়া যারা ঘুরে। হ্যারা টানা টানা কইরা কথা কয়, ঠাস ঠাস্ কইরা সেলুট মারে, হ্যারা সব সুবিধা পাইবো। বিদেশ যাইবো, ট্যাকার বস্তা লইয়া বাড়িত যাইবো... সব হ্যাগো জইন্য। আমরা টেনিং লই নাই? আমরা দ্যাশ রক্ষা করি না? হেই বছরে শরীফ ভাইরে গোক্ষুর সাপে কাটলো।.... পাহাড়ে জঙ্গলে জোঁকের কামড় খাইয়া আমি তিন দিন জ্বরে বেহুঁশ আছিলাম। চাচায় আসলো, কইলো এখন ছুটি লওয়া যাবে না।’ ক্যান, আমার মনে কি বিশ্রাম লওনের ইচ্ছা লাগে না?
- ওইডা তো তোমার চিকিৎসার জইন্য ভালোই
ওপাশ থেকে বলে উঠলো আর একজন।
তোমরা হগলে থামো। থামবা? মানুষ না, নিজেগো মানুষ মাইরা শ্যাষ করছ। আমাকে কও, মঈন স্যারের কোনো দোষ আছিলো? হ্যার চাকরি সেই দিন শ্যাষ হইতাছে। সে হগলের সাথে দেখা করতে আসছিল। আমি তো জানি ডিসিপ্লিন আর ডিউটি বাদ দিলে ওই রকম মায়াদারি ব্যবহার আর হইবো না। তাকেও তোমরা ছাড়ো নাই...। তারে মাইরা বুকটা ফাইড়া... 



কোণের দিক থেকে একটা ফোঁপানির আওয়াজ আসে। হবে ফোর্সেরই কোনো আবেগি ছোকরা। ভাবে আলেক মিয়া। অনুতাপ করছে। না জেনে জঘন্য এক ব্যাখ্যাহীন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। কখনো বাবা-মায়ের জন্য, কখনো প্রিয়ার জন্য বুকের মধ্যে হাহাকার উঠছে তাদের। প্রশ্ন জাগে, কালো রুমালে মুখ ঢেকে শুভাকাক্সক্ষী সেজে যারা এসেছিল তারা কি বোঝাতে চেয়েছিল? বঞ্চনা, প্রতারণা, অনেক শব্দের মানেও তারা জানেন না। কিন্তু রেগুলার সেনাবাহিনীর সাথে তুলনা করতেই ঈর্ষার আগুন জ্বলে উঠেছিল সরল, নিয়মতান্ত্রিক মানুষগুলোর মধ্যে। কী যেন ঘটেছিল মনের গহিন রহস্যময় অরণ্যে।


এমনটাই ঘটে থাকে। আচমকা আকাশের রঙ কালচে হয়ে যায়। মাটির গভীর থেকে উঠে আসা ক্রোধ ধোঁয়ার লাভা, গুঁড়িয়ে দেয় জনপদের চিহ্ন। অথচ গোড়ার কাহিনী তো খুবই সাদাসিধে মানুষদের বিষয়। কয়েক বছর আগে বাপের সাথে ক্ষেত নিড়াচ্ছিল আলেক মিয়া। পাশ দিয়ে বাদামি ইউনিফর্ম পরে চকচকে ঝকঝকে মানুষটা চলে যেতে যেতে আইলের ওপর থমকে দাঁড়িয়েছিল। ‘আরে কাসেম আলী ভাই? এ দিকে কী মনে করে?’ হাতের কাঁচি রেখে ডেকে উঠেছিল বাজান।



কাজে এসেছিলাম। ভাবলাম মা-বাপের সাথে দেখা করে যাই। তা, জলিল ভাই এইটা কি বড় পোলা? বয়স কত?
সালাম কর, আলেক, সালাম কর। তোর কাশেম আলী চাচা। অনেক বড় চাকরি। দেশ রক্ষা করে।
ছেলেরে দিবা নাকি জলিল ভাই? এত সুন্দর জোয়ান ছেলে দেশের জন্য কত কী করতে পারে। এরা না করলে কারা করবে?
আলেকের আজো স্বপ্নের মতো মনে হয়। বুকভরা আশা, স্বপ্ন আর আকাক্সক্ষা। ছয়টা বছর কেটেছে ঘোরের মধ্যে প্রচণ্ড পরিশ্রম, দিন-রাত্রি সারা দেশের দুর্যোগের সামনে লড়াই। আবার কখনো বা ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ে হাড়ভাঙা খাটুনি। অসন্তোষ কী জিনিস সেটা কখনো ভাবেনি। নিয়ম মতো খাওয়া-দাওয়া, শক্ত নিয়মে কাজ, স্যালুট ঠোকা, শোঁ শোঁ করে হোন্ডায় চেপে সংবাদ আনা-নেয়া করা। মাঝে মধ্যে বাজানের জন্য মন কেমন করে সেটা ঠিক। রোদবৃষ্টিতে ভিজে পুড়ে মানুষটা কাজ করে। অবশ্য চাচারা সাথে কাজ করে। আলেক টাকা পাঠায়, চিঠি লেখে।, বাড়িতে দুই দিনের ছুটিতে গেলে মা আর বোনের জন্য সুগন্ধি সাবান, একটা শাড়ি নিতে সে কখনো ভোলে না। মোটামুটি খারাপ তো সে ছিল না। তবে কার উসকানিতে জেগে উঠল অপরিচিত তিক্ততা?


 


অফিসাররা পাশ দিয়ে গেলে শক্ত কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকার নিয়ম। অফিসারদের বাজারহাট করা, বাগানের ফুলে তোড়া বানিয়ে দেয়া এসবই তাদের জন্য রুটিন ওয়ার্ক। কিন্তু মাটির নিচে যে এক অন্ধকার সুড়ঙ্গ খুঁড়ছিল আলেক, বিলাল, সিরাজ আর মোস্তাফার মতো সাধারণ সিকিউরিটি পারসনের তা জানার সুযোগ হয়নি।


 


প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণ ঘটে গেছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের কেন্দ্রে। আনন্দ উৎসবের মাঝখানে হঠাৎ ফুঁসে উঠেছে ক্রোধের বিষ, রক্তে ভেসে গেছে উৎসবের আয়োজন। অফিসাররা টের পাওয়ার আগেই বন্দুক তাক করেছে চিরকালের বিশ্বস্ত মানুষেরা। মাটির ক্ষমতা নিয়ে দেশকে সেবা দেয়ার স্বপ্নে নিবেদিতপ্রাণ সরল মানুষগুলো যেন কোন পিশাচ মন্ত্রে রক্তের নেশায় মেতে উঠেছিল। হাসিমুখে কুশলপ্রত্যাশী মানুষগুলো বুঝতেও পারেননি, নীল আকাশ থেকে নেমে আসছে উৎসবের বেলুন নয়, মৃত্যুর দানব আকাক্সক্ষা।


 


ইঁদুরগুলো কি সংখ্যায় বেড়ে যাচ্ছে? পায়ের ওপর দিয়ে বেহায়ার মতো হেঁটে যাচ্ছে। সাদা সাদা দাঁত মেলে কিচ কিচ শব্দ তুলে ওরা তাকায় লোকগুলোর বিহ্বল মুখের দিকে। একটা ঘরে গাদাগাদি করে কম্বল পেতে ঘুমোনোর চেষ্টা বড় করুণ মনে হয়। একটা বাতাসের ঝাপটা ঘরটাকে ঘিরে ধরে। ঘুমোনোর চেষ্টায় আজ কতদিন ধরে সে চেষ্টা করে যাচ্ছে! কিন্তু তন্দ্রা এসে যেন রসিকতা করে যায় ওদের সাথে। অথচ আগে আগে প্রচণ্ড পরিশ্রম করে রাতের ঘুম ছিল নিশ্চিন্ত আরামের ব্যাপার। হট্টা কট্টা চেহারার আলেক মিয়া হেঁটে গেলে মানুষ প্রশংসার চোখে চেয়ে দেখত। মজবুত স্বাস্থ্যের যতœ নেয়ার জন্য নিয়ম করে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যেতে হতো। তার ইউনিটের স্যার প্রায়ই বলতেন, মানুষের সিকিউরিটি দেখার দায়িত্ব অনেক বড়। শরীর মজবুত হওয়া দরকার।



কিন্তু এখন সব কিছু আচমকা বদলে যাচ্ছে আশপাশের কয়েকটা মানুষ পটাপট কোনো কারণ ছাড়াই মরে গেল। তার পরে আলেক মিয়া, মোস্তাফা আর জলিলদের বুকের মধ্যে ধড়ফড় করে। মাঝরাতে ছায়ামানুষেরা ঘোরাফেরা করে, ফিস ফিস করে কানের কাছে। কান্নার মতো ডুকরে ডুকরে ওঠে। কী যেন বলতে চায়, দুই হাত যেন বলতে চায়, দুই হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরেও সোঁদা গন্ধটা এড়াতে পারে না আলেক। ছোট থাকতে মা বলত কোরবানির পরে বড় বড় শকুন এসে ন্যাড়া পাকুড়গাছে বসে। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মরা গরুর বাসি রক্ত/মাংস খায়। তার সোঁদা গন্ধ ঢাকতে মানুষ চুন দিয়ে গর্ত ভরে দেয়। এত দিন পরে সে গন্ধটা কেন তাকে তাড়া করে? গন্ধটা একটা পুরনো ঘায়ের মতো তার গায়ে লেপটে থাকে। দম নেয়ার ইচ্ছেয় চেষ্টা করেও সুস্থির হতে পারে না আলেক। চোখ দুটো কোনোমতে বন্ধ করার চেষ্টা করে। পিঠের কাছে রমজানও ঘুমাতে চেষ্টা করছে। কয়েকটি মানুষের চেষ্টাকে বিদ্রপ করে একটা টিকটিকি কোথা থেকে ডেকে ওঠে।


ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্সের ভয়াবহ বিদ্রোহ, নিয়ে দীর্ঘ তদন্ত, মামলার শুনানি, চলতে থাকে। মানুষের অন্তহীন ক্ষোভ, ক্রোধ আর প্রবৃত্তির দ্বন্দ্বে পরাজিত হয়, ক্লান্তির পরিণামে।



ভয়াবহ দুর্যোগের চিহ্নও এক সময় মলিন হয়ে আসে। গর্তগুলো ভরাট করা হয়। শ্মশান-শূন্যতায় জীবন তার হাত বাড়িয়ে দেয়। মুছে যায় মৃত্যুর চিহ্ন।
একটা প্রচণ্ড ভূকম্পনের ধাক্কায় মানুষগুলো ভুল করেছিল। যেমন করে গোর্কি আসে, মাটির গভীরে কোথায় লুকানো ফাটল ধীরে ধীরে জিহ্বা মেলে দেয়। গ্রাস করে জনপদ। ঠিক তেমনই কোথাও আগুনের একটি ফণা। নিঃশব্দে অপেক্ষা করে। সময় গুণে গুণে নিঃশব্দে ভেঙে নেয় মানুষের স্বপ্নসাধ।
আপনি কি অন্যায় করেছিলেন বলে স্বীকার করেন? বিচারক প্রশ্ন করেন।
 ইচ্ছায় নয় স্যার, না বুঝে ভুলের চাপে, ...



দিনের পর দিন মানুষ কথা বলে, কথোপকথনের ক্লান্তিহীন ধারাবাহিকতায় চলতে থাকে সব কিছু। দিনগুলো ক্লান্ত, শ্লথ ভারী হয়ে ওঠে। শেষের অপেক্ষায় অপরাধের ভারে নুয়ে পড়ে সিকিউরিটি ফোর্সের গর্বিত, ঐতিহ্য সৌন্দর্যে উন্নত মাথাগুলো।
আর মানুষেরাও? তারা কী ভাবে? তারা লজ্জিত, হেঁট মাথা, ব্যথিত সাধারণ মানুষের মতো ঘরে ফিরে যায়। দ্রব্যমূল্য, রোগবালাই, জ্বালানি সমস্যা, চিকিৎসা নিয়ে প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধের কাছে শুকনো রক্তাক্ত, ছিন্নভিন্ন ভয়াবহ মৃত্যুর স্মৃতিও ফিকে হয়ে আসে।


আলেক মিয়া, রইস জমাদ্দার, হেলাল উদ্দিন... নামগুলো একে একে মুছে যাচ্ছে। ছোট্ট এক আধটু আফসোসের শব্দ। মৃত্যু ঘটছে কেন এসব তরুণ, মাঝবয়সী লড়াকু লোকগুলোর? আত্মহত্যা করে বসেছে আলেক আর মোস্তাফা। ডাক্তার আসেন, মুখটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখেন, খস্ খস্ করে ডেথ সার্টিফিকেট লেখেন। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, হার্ট ফেইলিওর ঘটিয়েছে। আশা, স্বপ্ন, ক্রোধের শব্দগুলো বাতাসে পাক খায়। শব্দগুলো যন্ত্রণার মতো গুমরে গুমরে কাঁদে। সবাই ভুলে যায়। এক সময় মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। বিস্মৃত হয় ইতিহাস।
কিন্তু সবাই কি যায়? গর্ত থেকে মুখ বাড়ায় ধেড়ে ইঁদুরটা। ওদের সংখ্যা যেন ক্রমে বেড়ে গেছে। মানুষের অহঙ্কারের, গৌরবের পতন দেখে ওরা যেন মুচকি হাসে। নতুন কয়েদিকে নিঃশব্দে বলে ঘুমাইলা নাকি?’ বিড়ালটা মাটির ঢিবিতে বসে পা লম্বা টান টান করে আড়মোড়া ভাঙে। আলস্যে হাই তোলে। বিকেলের আলস্য, সকালের প্রসন্নতা, সব কিছুর মধ্য দিয়ে অপেক্ষা করে। ওরা বলে মানুষের ছাও, বহুত বাড় বাড়ছে। তোমাগো। তাই না? কত কিসিমে, মানুষ হইয়া দেমাগ দেখাইয়া ফস্ কইরা জীবন জানোয়ার মাইরা ফালাও। মাটির তলে যাইবা না? তখন দেহা যাইবো।’ টিকটিকিটা কোন অন্ধকার আস্তানা থেকে বেয়াদবের মতো তালি বাজায়। মানুষের পরাজয়ে তাদের ফুর্তির সীমা নেই। অন্ধকারের সাথে একসাথে অপেক্ষা করে মানুষের পরিণামের জন্য।


 

0 comments:

Post a Comment