মধ্যপ্রাচ্যে ৫৪ বছর বয়সী হামাস নেতা খালেদ মেশালের মতো আর কেউ বিতর্ক সৃষ্টি করেননি, বলা চলে। অনেক ফিলিস্তিনির কাছে তিনি হলেন ন্যায়সঙ্গত ও র্যাডিক্যাল জাতীয়তাবাদের প্রতিভূ। অন্য দিকে ইসরাইলিরা মনে করে, তিনিই আত্মঘাতী ও রক্তক্ষয়ী বোমাবাজি ও রকেট হামলার স্থপতি। ১৯৯৭ সালে হত্যার লক্ষ্যে ইসরাইলের গোয়েন্দ
ারা স্নায়ু ধ্বংসকারী বিষ ঢুকিয়েছিল মেশালের কানে। কিন্তু তিনি বেঁচে যান। এরপর ধাপে ধাপে উঠেছেন হামাস নেতৃত্বের ক্ষেত্রে। নিরাপদ অবস্থান থেকে হামাসকে চালাচ্ছেন।
প্রশ্ন : (ইসরাইলের) ১৯৬৭ সালের সীমানা মোতাবেক দু’রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান
কি মেনে নেবেন?
উত্তর : আমি আপনার তাত্ত্বিক প্রশ্নের জবাব দিতে পারি। কিন্তু এটা ঘটবে বলে আশা করা যায় না। এমন এক অবস্থান ও কর্মসূচি আছে, যা সব ফিলিস্তিনিই সমর্থন করেন। এটা হচ্ছে, জেরুসালেমকে রাজধানী করে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার মেনে নিয়ে, ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা। ভূমি ও সীমানার ওপর এই রাষ্ট্রের থাকবে সার্বভৌম ক্ষমতা। আর থাকবে না কোনো (ইহুদি) বসতি।
প্রশ্ন : শান্তি প্রক্রিয়ায় হামাসের ভূমিকা কী?
উত্তর : আলোচনা থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ইসরাইলিদের ওপর প্রকৃত চাপ দেয়া ছাড়া তারা ’৬৭ সালের সীমান্তে ফিরে যাবে না। হ্যাঁ, আমরা কূটনীতি ও রাজনীতি নিয়ে আছি। তবে আসল উপায় হলো প্রতিরোধ।
প্রশ্ন : কী কী শর্তের আওতায় আপনারা সহিংসতা বন্ধ করবেন?
উত্তর : আমি একজন পদার্থবিজ্ঞানী। আমি পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের সমীকরণে বিশ্বাস করি। অতএব, এটা আদি অন্তহীন কোনো দুষ্টচক্র নয়। এর শুরু (ইসরাইলি) দখলদারির সাথে। তাই দখলদারি শেষ হলে এটাও শেষ হয়ে যাবে। প্রতিরোধ করা হলে অবশ্যই হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এটা বেদনাদায়ক কঠিন মূল্য। কিন্তু ফিলিস্তিনের প্রতিরোধকে কেন দেখবেন আলাদা করে? যখন ফরাসিরা হিটলারের ও নাৎসি দখলদারির বিরুদ্ধে লড়েছে, তাকে প্রতিরোধ বলা হয়েছে। যখন আমেরিকানরা লড়েছে ব্রিটিশদের মোকাবেলায়, তখন এটাকে বলা হলো স্বাধীনতা যুদ্ধ। হামাসের কোনো সামরিক তৎপরতা নেই ফিলিস্তিনের বাইরে।
প্রশ্ন : এই সঙ্ঘাতের কতটুকু ব্যক্তিগত?
উত্তর : (ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী) নেতানিয়াহুর সাথে আমাদের সঙ্ঘাত ব্যক্তিগত নয়। এটা জাতীয় ইস্যু।
প্রশ্ন : আপনি নেতানিয়াহুর সাথে একই টেবিলে মুখোমুখি আলোচনায় বসবেন?
উত্তর : (হাসি) আমি ফলাফলের ব্যাপারে আগ্রহী। তা হচ্ছে, ফিলিস্তিনি জনগণ স্বাধীনতায় উপনীত হওয়া, তাদের অধিকার অর্জন, ইসরাইলি দখলদারি ও বসতি স্থাপন থেকে মুক্তি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারসহ সার্বভৌম ভূখণ্ডে স্বাধীন জীবন।
প্রশ্ন : নিকট ভবিষ্যতে কি হামাস ও ফাতাহর মধ্যে সম্পর্ক উন্নত
হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন?
উত্তর : কেন এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব? এটা ঘটার কারণ, মার্কিন প্রশাসন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দুর্ভাগ্য হলো, এই অঞ্চলের দেশগুলো (২০০৬ সালের নির্বাচনের) ফলাফল মেনে নেয়নি। এটা আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের নীতিগুলোর পরিপন্থী। আমরা উপলব্ধি করি যে, আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হামাসসহ গোটা ফিলিস্তিন ইস্যুর ক্ষতি করছে। কিন্তু কেবল আমরা এতে জড়িত নই। বরং আমাদের ওপর এটা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন : আপনারা কি ইরান থেকে অর্থ, অস্ত্র ও সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন?
উত্তর : অস্ত্রের কথা বলতে গেলে, এটা সামরিক শাখার ব্যাপার। আর অর্থের কথা বললে, এটাই বলব যে পর্যন্ত শর্তমুক্ত থাকবে, পৃথিবীর যে কারো আর্থিক সমর্থনকে হামাস স্বাগত জানায়।
প্রশ্ন : ইরান সরকারের দেয়া অর্থ কি শর্তবিহীন?
উত্তর : অবশ্যই। বিশ্বের অন্য যারা আমাদের সাহায্য করছে, সবই শর্ত থেকে মুক্ত।
প্রশ্ন : দু’রাষ্ট্রের ভিত্তিতে (ফিলিস্তিন ইস্যুর) সমাধান হলে আপনার নিজের মর্যাদা কী দাঁড়াবে?
উত্তর : (হাসি) আমি মর্যাদা খুঁজি না। আমি তো নিশ্চয়তা দিতে পারি না যে, তখন বেঁচে থাকব। আমার জনগণ স্বাধীন হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
0 comments:
Post a Comment