মালয়েশিয়ান বিমানটির (ফাইট এমএইচ-৩৭০) খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে মধ্য আকাশ থেকে বিমানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। বিমানটি কোথায় গেল, এর কী হলো কিছুই জানা যায়নি। এ নিয়ে অনুসন্ধান, গবেষণা কম হয়নি। এখনো অনুসন্ধান চলছে। সম্প্রতি এ নিয়ে মুখ খুলেছেন এমিরেটস এয়ারলাইনের প্রধান স্যার টিম কার্কও। তার সন্দেহ হচ্ছে, সত্য প্রকাশ করা হচ
্ছে না, কিছু একটা আড়াল করা হচ্ছে।
তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে এমিরেটসের সাথে যুক্ত রয়েছেন। যাদের হাত ধরে এয়ারলাইনটি বিশ্বের অন্যতম বিমান সংস্থায় পরিণত হয়েছে, তিনি তাদের অন্যতম। বর্তমানে ৬৪ বছর বয়স্ক কার্ককে বেসামরিক বিমান চলাচল শিল্পের অন্যতম বিশেষজ্ঞ এবং সমালোচক বিবেচনা করা হয়। ফলে ৮ মার্চ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মালয়েশিয়ান বিমানটি নিয়ে তার বিশ্লেষণ বিশেষ মনোযোগ পাওয়ার দাবি রাখে।
মালয়েশিয়ান বিমানটি ছিল বোয়িং-৭৭৭, আর এমিরেটসে এ ধরনের ১২৭টি বিমান পরিচালনা করে। বিশ্বে অন্য কোনো এয়ারলাইনে এত সংখ্যক এই বিমান নেই। এ নিয়ে জার্মানীর স্পাইজেল অনলাইনকে দেয়া কার্কের একটি সাাৎকার অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ হাসান শরীফ
স্পাইজেল : এখন অক্টোবর, সাত মাস আগে মালয়েশিয়ান বিমানটি নিখোঁজ হয়েছিল। আমরা এখনো জানি না, কী ঘটেছে বিমানটির ভাগ্যে। এ ব্যাপারে এখনো আলোকপাত করার প্রয়োজন রয়েছে।
কার্ক : এমএইচ-৩৭০ এখনো বিমান চলাচল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটি হিসেবে রয়ে গেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিষয়টিকে আমাদের এভাবেই গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়া উচিত। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকেও এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা যেতে পারে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করারও দরকার রয়েছে। কিভাবে বিমানটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, সেটাও আমাদের জানা দরকার রয়েছে।
স্পাইজেল : কিভাবে বিমানটি নিখোঁজ হলো বলে আপনি মনে করেন?
কার্ক : আমার মত হলো, ওই বিমানের নিয়ন্ত্রণ কেউ গ্রহণ করেছিল।
স্পাইজেল : তারা কারা, কিভাবেই তা হতে পারে?
কার্ক : কারা করেছে, তা প্রত্যেকেই অনুমান করতে পারে। বিমানটিতে কারা ছিল, সে ব্যাপারে আমাদের বিস্তারিত জানতে হবে। কোনো না কোনো মানুষ তাদের চেনেই। বিমানটির হোল্ডে কী কী ছিল সেটাও জানতে হবে। যারা অনুসন্ধানকাজে নিয়োজিত তাদের কাছ থেকেও অব্যাহত তথ্য পেতে হবে। বোয়িং-৭৭৭ বিশ্বের অন্যতম উন্নত বিমান। এর কমিউনিকেশন প্লাটফর্মও আধুনিক। ফলে এসব দিকে আরো উন্নত করার পরামর্শ দেয়ার কোনো দরকার নেই। এই বিমানকে নজরদারির বাইরেও নেয়া যায় না।
স্পাইজেল : এর মাধ্যমে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন?
কার্ক : এই বিমানের ট্রান্সপোন্ডারগুলো ফাইট ডেকের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এগুলো দিয়ে বিমান শনাক্ত করার কাজে ব্যবহার করা হয়। ট্রান্সপোন্ডার অফ করা হলে বিমানটি রাডারের স্ক্রিন থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বোয়িং-৭৭৭ বিমানে এমনটি করা সম্ভব নয়। পাইলট যখনই ট্রান্সপোন্ডার অফ করে দিন না কেন, বিমানটি ঠিকই শনাক্ত করা যাবে।... আর সব দিক বিবেচনা করে বলতে পারি, আমার অভিমত হচ্ছে, মালয়েশিয়ান বিমানটি একেবারে শেষ পর্যন্ত ছিল নিয়ন্ত্রণে।
স্পাইজেল : তা-ই যদি হয়ে থাকে, তবে পাইলটরা কেন বিমানটিকে পাঁচ ঘণ্টা উড়িয়ে অ্যান্টার্টিকার দিকে নিয়ে গেলেন?
কার্ক : তারা কী সেটাই করেছে! আমি বলতে যাচ্ছি, এই বিশেষ ঘটনার সব ‘তথ্য’ অবশ্যই পরিপূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে পরীা ও চ্যালেঞ্জ করা দরকার। আমরা সেটার ধারেকাছেও নেই। এখনো অনেক তথ্য অজানা রয়ে গেছে। সেগুলো অত্যন্ত তীক্ষ্, স্বচ্ছ ও ব্যাপকভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। বিমানটির ভারত মহাসাগরে যাওয়া পর্যন্ত এর প্রতি সেকেন্ডের তথ্যগুলো পুরোপুরি জানতে হবে। অবশ্য ভারত মহাসাগরে অনুসন্ধান চালিয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই, এমনকি একটা কুশন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
স্পাইজেল : এতে কি আপনি বিস্মিত? সম্ভাব্য ক্র্যাশ এলাকা ছিল অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমভাগের বিশাল এলাকায়। সেখানে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বেশ দেরিতে।
কার্ক : আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, কোথাও কোনো বিমান বিধ্বস্ত হলে কিছু না কিছু থাকবেই। তথাকথিত ইলেকট্রনিক ‘হ্যান্ডশেক’ ছাড়া সেখান থেকে বলতে গেলে কিছুই পাওয়া যায়নি। আর যে ‘হ্যান্ডশেকের’ কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
স্পাইজেল : মালয়েশিয়ান বিমানটি কোন দিকে গেছে বলে আপনার মনে হয়?
কার্ক : আগের সব বিধ্বস্ত ঘটনায় কিছু না কিছু প্রমাণ উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু মালয়েশিয়ান বিমানটি পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে গেছে। এতে আমার সন্দেহ বাড়ছে। অনুসন্ধানে যা কিছু পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আমি পুরোপুরি অসন্তুষ্ট।
স্পাইজেল : অনুসন্ধান কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বাড়াতে কী কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
কার্ক : আমি অনুসন্ধানকাজের সাথে জড়িত নই। আমি স্রেফ একটি এয়ারলাইনের ম্যানেজার। তবে বিমানটি নিয়ে আমি নিজে নিজেই ভাবি। ওই বিমান এবং তাদের পরিবার সদস্যদের প্রতি আমাদেরও কর্তব্য আছে। আমরা বিষয়টি ভুলে যেতে পারি না। আমাদের আরো কিছু করা দরকার।
স্পাইজেল : চলতি বছর মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন দু’টি ভয়াবহ ঘটনার শিকার হয়েছে। একটি বিমান নিখোঁজ হলো, আরেকটি ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হলো। আপনি যদি ওই কোম্পানি চালাতেন, তবে কী করতেন?
কার্ক : খুবই কঠিন কাজ। আমরা কেউ এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়িনি। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনের জন্য কাজটি খুবই কঠিন। তাদের এখন সার্বিক বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। তাদের একটি সমাধান বের করতে হবে। তবে ব্র্যান্ডিংয়ে যে তি হয়েছে, তা কাটানো খুবই কঠিন।
0 comments:
Post a Comment