[ আলী সৌফান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন সংক্ষেপে এফবিআইয়ের সাবেক একজন এজেন্টে। ৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। জার্মানির স্পাইজেল পত্রিকায় সম্প্রতি তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইএস যে কৌশল অবলম্বন করেছে তাতে তারা আশাতীত সাফল্য পাচ্ছে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে মারাত্মক ভুল হয়ে যাচ্ছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্রিত্তা স্যান্ডবার্গ। সাক্ষাৎকারটি ভাষান্তর করেছেন হাসান আব্দুল্লাহ ]
স্পাইজেল : আইএসের মিডিয়া কৌশল বিষয়ে আপনি সম্প্রতি ব্যাপক আকারে গবেষণা চালিয়েছেন। ফেসবুক টুইটার পোস্টসহ অনেক ভিডিও ডকুমেন্ট আপ
নি বিশ্লেষণ করেছেন। আইএসের সাথে অন্য সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কি পার্থক্য দেখতে পেলেন?
সৌফান : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাথে তারা খুব ভালোভাবে পরিচিত। তারা জানে এটা কিভাবে কাজ করে। আইফোন জেনারেশনের কাছে পৌঁছার ব্যাপারে তারা খুব দক্ষ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। যেমন উপসাগরীয় অঞ্চলে তারা মূলত টুইটার এবং সিরিয়ায় তারা ফেসবুক মাধ্যম ব্যবহার করছে। এ ধরনের সংগঠনগুলোর মধ্যে এটাই (আইএস) হলো প্রথম কোনো সংগঠন যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুরুত্ব অনুধাবন করেছে।
স্পাইজেল : আইএস প্রচারণা বিভাগে কী পরিমাণ জনবল কাজ করছে তা আপনার জানা আছে?
সৌফান : বিশাল একশ্রেণীর ব্লগার, লেখক এবং জনগণ রয়েছে যারা শুধু দেখছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আইএসের জন্য কাজ করছে; এটা দেখা ছাড়া তারা আর কিছুই করছে না। আমাদের গবেষণা অনুযায়ী আইএসের সামাজিক যোগাযোগকার্যক্রম উপসাগরীয় এবং উত্তর আফ্রিকাকেন্দ্রিক। আবু আমর আল শামী এ প্রোগ্রাম চালু করেন। তিনি সিরিয়ান বংশোদ্ভূত সৌদি নাগরিক। আমরা একপর্যায়ে দেখলাম ১২ হাজার টুইটার অ্যাকাউন্ট আইএসের সাথে সংযুক্ত। তাদের প্রচারণাকার্যক্রমকে বাইরে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা ব্যতিক্রমী পদ্ধতি, যা এ গ্রুপ প্রয়োগ করেছে এ ক্ষেত্রে। বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেয়ে তারা বার্তার বিষয়কে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এটা নতুন।
স্পাইজেল : এর মানে আসলে কী দাঁড়াল?
সৌফান : যেমন ধরুন তারা তথাকথিত ‘টুইটার বম্ব’ ব্যবহার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সবচেয়ে জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগগুলো অনুসরণের মাধ্যমে তারা এটা করে। যেমন ধরা যাক ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ হ্যাশট্যাগ তারা ব্যবহার করেছে। যারা বিশ্বকাপের হ্যাশট্যাগ ফলো করেছে তারা সবাই যাতে আইএসের বার্তা পায় সে জন্য তারা বিশ্বকাপ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বার্তা পাঠিয়েছে যদিও তারা এ খেলায় খুব একটা আগ্রহী নয়।
স্পাইজেল : এবং এ পদ্ধতি কি সফল হয়েছে? তারা কি বিশ্বকাপ ফুটবলভক্তদের থেকেও তাদের দলে ভাগিয়েছে?
সৌফান : বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ লোক রয়েছে যারা আইএসের বার্তা পাবে। মানুষের কাছে পৌঁছার ক্ষেত্রে তারা অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। কিন্তু তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য যারা তাদের টার্গেট করেছে তাদের থেকে মাত্র ১ অথবা ২ শতাংশকে ভাগাতে পেরেছে। ২০১৪ সালের জুন নাগাদ তাদের বিদেশী সৈন্যসংখ্যা ছিল ১২ হাজার, আজ সে সংখ্যা ১৬ হাজার দাঁড়িয়েছে। তারা চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং অবশ্যই ইউরোপ থেকে বেশ কিছু লোককে তাদের দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়েছে। তারা অনেক ভাষায় তাদের বার্তা পাঠায়; এমনকি ডাচ ভাষায়ও।
স্পাইজেল : টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার মতো পদক্ষেপ নিয়ে আসলে কি কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব?
সৌফান : এটা খুব কঠিন। টুইটার যখন কোনো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় তখন তারা আরেকটি খোলে। তাই এটা খুবই কঠিন কাজ। গত সেপ্টেম্বরে সিরিয়ায় আমেরিকান সাংবাদিক স্টিভেন সটলফ হত্যার ভিডিওর কথাই ধরা যাক। আমরা রিপোর্টে উল্লেখ করলাম যে, আসলে কি হয়েছিল তা বুঝতে দু’দিন সময় লেগেছে। কিন্তু এরই মধ্যে সমগ্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর বার্তা ছড়িয়ে পড়ল। তেমন একটা পরিচিতি নেই এমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন কুইটার এবং ডায়াসপোরাকেও ব্যবহার করেছে আইএস। জাস্টপাস্ট ডট আইটি মাধ্যমেও তারা ভিডিও লিংক দিয়েছে। জাস্টপাস্ট পোল্যান্ডভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট যেখানে সিনেমাসহ বিভিন্ন ভিডিও লিংক শেয়ার করা হয়।
স্পাইজেল : বার্তা দিচ্ছে ঠিক আছে কিন্তু তরুণ সমাজকে এটা এতটা আকৃষ্ট করছে কেন?
সৌফান : এ ধরনের সংগঠনে যোগদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কারণ কাজ করে। আজকে যারা আইএসে যোগ দিয়েছে ৯/১১ আক্রমণের সময় তারা ছিল ছোট শিশু। আপনি সম্পূর্ণ একটি নতুন প্রজন্মের মুখোমুখি যারা বৈশ্বিক জেহাদকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। তাদের কাছে আলকায়েদা হলো পুরনো কিছু লোকজনের আখড়া। আমি বলছি ওসামা বিন লাদেনের উত্তরসূরি আয়মান আল জওয়াহিরির দিকে তাকান। এখন আর তার কোনো ক্যারিশমা বা চমক লাগানোর মতো কিছু নেই। কিন্তু আইএস হলো নতুন এবং আধুনিক ধরনের সংগঠন। তারা নতুন লোকজনকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে। তারা অন্তত কথাবার্তা বলছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওসামা বিন লাদেন এখনো তাদের কাছে হিরো। অসংখ্য আইএস অনুসারীর ওয়েবপেজে তার ছবি রয়েছে। তাদের আদর্শ বদলায়নি, কৌশল বদলিয়েছে।
স্পাইজেল : ইসলামিক স্টেটের সফলতা দমনের কোনো উপায় আছে কি?
সৌফান : আমাদের ব্যর্থতা হলো ৯/১১ হামলার পর তাদের বক্তব্যের মোকাবেলায় আমাদের কৌশলে কখনোই তাদের যুদ্ধের পেছনে আদর্শের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমরা আমাদেরকে নিরাপদ রাখা, তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করা, গ্রেফতার এবং হত্যা বিষয়ে পরিকল্পনা কৌশল এবং ছক তৈরি করেছি। এমনকি ওসামা বিন লাদেনকেও মারা হয়েছে। কিন্তু তাদের দাবি মোকাবেলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না আমাদের। ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিন লাদেনের ৪০০ শপথ করা যোদ্ধা ছিল। আর আজ সারা বিশ্বে আইএসের হাজার হাজার যোদ্ধা এবং অনুসারী রয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে একটি ব্যর্থতা।
0 comments:
Post a Comment