WHAT'S NEW?
Loading...

‘জি-৭’ সম্মেলন রুশ-মার্কিন বিরোধ

 


সর্বাধিক শিল্পোন্নত দেশগুলোর ফোরাম ‘জি-৭’ এবার রাশিয়াকে বাদ দিয়েই শীর্ষ সম্মেলন সম্পন্ন করেছে। গত বছর ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল এবং দেশটির পূর্বাংশে বিদ্রোহীদের ছত্রছায়া দেয়ার কারণেই রাশিয়াকে জি-৭ সম্মেলনে ডাকা হয়নি। অর্থনৈতিক ফোরাম হিসেবে প্রতীয়মান হলেও জি-৭ রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবার এর এজেন্ডায় ইউক্রেন সঙ্কট ও জঙ্গিবাদের মতো রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে আর্থসামাজিক নানা ইস্যুর সাথে।


৭ জুন জার্মানির ব্যাভারিয়া প্রদেশের এলমাউ ক্যাসল হোটেলে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছিল। এতে অংশ নেন স্বাগতিক জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল ছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও

বেনজি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তাদের সাথে যোগ দিলো জাতিসঙ্ঘ, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানরা। ক্রিমিয়া ইস্যুতে রাশিয়াকে জি-৭ থেকে বহিষ্কার করার পরিপ্রেক্ষিতে এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন অংশ নিতে পারেননি। তবে সশরীরে হাজির না হলেও তিনিই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। জি-৭ সম্মেলনে বিশ্বে টেকসই উন্নয়ন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, নারী সমাজের ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মোকাবেলা এবং বিভিন্ন ব্যাধি ঠেকানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।



৫ জুন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টার এএফপিকে বলেন, রাশিয়াকে রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের ভিন্ন দেশে মিসাইল মোতায়েনের কথা ভাবছে। গত বছর থেকে আমেরিকা অভিযোগ করছে, ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল পরীক্ষার মাধ্যমে রাশিয়া অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তির অনুমোদিত এবং চুক্তির বহির্ভূত দুই ধরনের ব্যবস্থাই মস্কোর বিরুদ্ধে নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
যা হোক, ৬ জুন রুশ নেতা পুতিনের একটি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। এতে তিনি পশ্চিমা জগতকে অভয় দিয়ে বলেন, রাশিয়ার ব্যাপারে আতঙ্কের কিছু নেই। রাশিয়া ন্যাটোকে আক্রমণ করবে শুধু অসুস্থ ব্যক্তিরাই স্বপ্নে এমনটা মনে করতে পারে। যুদ্ধ ছাড়াই আমাদের বহু কিছু করার আছে। রাশিয়া যুদ্ধের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। তাই হুমকিও নয় কোনো দেশের জন্য।’
রুশ সমরসজ্জা নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই বলে পুতিন আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, রাশিয়া যা করছে, তা নিজেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে। তদুপরি, রাশিয়া সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে যত ব্যয় করে, অন্যরা করছে এর দশ গুণ। যুক্তরাষ্ট্রকে ‘খোঁচা মেরে’ পুতিন স্মরণ করিয়ে দেন, সামরিক ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনই সর্বাধিক অর্থ ব্যয় করে থাকে।



<

span style="font-size: 14pt;">রাশিয়া তার একই ভাষা এবং অভিন্ন নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের সুবাদে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়াকে বিচ্ছিন্ন ও কুক্ষিগত করে নিয়েছে। ইউক্রেনের বিদ্রোহীরা রুশ সাহায্যে ও মদদে দেশটির পূর্বাংশ দখল করে রেখেছে। অথচ রুশ প্রেসিডেন্ট বললেন, ইউক্রেন প্রতিনিধি উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে না চাওয়াই আসল সমস্যা। আমাদের কিছু করার নেই।’ অর্থাৎ মস্কো তার কোনো দায় স্বীকার করছে না ইউক্রেন প্রসঙ্গে।



পুতিনের এসব কথা প্রকাশ পাওয়ার পরদিনই জি-৭ সম্মেলনের উদ্বোধন দিবসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে পুরো ইউরোপকে চাইলেন। সম্মেলনে সবকিছু ছাপিয়ে ইউক্রেন ইস্যু এবং এর সূত্রে রাশিয়ার ভূমিকা ও মোকাবেলা প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী, রাশিয়াকে ঘায়েল করার প্লাটফর্মরূপে জি-৭ কে ব্যবহার করতে। আরো চায়, রাশিয়ার ওপর পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘায়িত হোক। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহের কোনো সিদ্ধান্ত আপাতত নিচ্ছে না। জার্মান নেত্রী মারকেল মনে করেন, সেখানে সমরাস্ত্র পাঠালে সহিংসতা বাড়বে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপ যাতে ঐক্যবদ্ধ থাকে, এ জন্য ইইউর ২৮টি দেশের সাথে চুক্তি করার ব্যাপারে জার্মানি, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র একমত। রাশিয়া হামলা করার আশঙ্কায় ইউক্রেন সঙ্কটের শুরু থেকে পাশ্চাত্য জগত পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
জি-৭ আগে ছিল জি-৮। কারণ তখন রাশিয়াও ছিল এই গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। তার সদস্যপদ স্থগিত করে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও ক্রেমলিনকে নরম করা যায়নি। ফলে ইউক্রেন ইস্যুর সুরাহার লক্ষণ নেই। এ দিকে, পাশ্চাত্যের সাথে মস্কোর দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা জোর দেন ‘রুশ আগ্রাসন’ রুখে দাঁড়ানোকে গুরুত্ব দেয়ার ওপর। এ জন্য রাশিয়াকে একঘরে করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।



ফিফার দুর্নীতি কেলেঙ্কারি জি-৭ সম্মেলনেও ছায়াপাত করেছে। সম্মেলনের প্রাক্কালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন বলেন, যে সাহসের সাথে ফিফার ভেতরের ভয়াবহ দুর্নীতি উন্মোচন করা হলো, তেমনি সারা বিশ্বের দুর্নীতি মোকাবেলায় জি-৭ নেতাদের এগিয়ে যেতে হবে। দু’দিনের জি-৭ সম্মেলনে ফিফার দুর্নীতি ইস্যু তোলা হবে বলে আগেই তিনি জানিয়েছিলেন। জি-৭ ফোরাম এ যাবত অনেক বিষয়ে আলোচনা করলেও দুর্নীতি কোনো দিন তাদের এজেন্ডায় ছিল না। এ জন্য এবার দুর্নীতিকে গুরুত্ব দেয়া কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় বৈ কি! তবে অনেকের মতে, ফিফার প্রসঙ্গ জি-৭ সম্মেলনে আনতে চাওয়ার বিশেষ কারণ, এর পদত্যাগী সভাপতি ব্লাটারের বিরোধিতা এবং ফিফার পরবর্তী প্রধানের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার।
মস্কো-ইউক্রেন ইস্যু ছাড়াও জি-৭ সম্মেলনে প্রাধান্য পায় মধ্যপ্রাচ্যে ‘ইসলামিক স্টেট’ জঙ্গি উত্থান এবং কোনো কোনো আফ্রিকান দেশে সন্ত্রাসবাদী হুমকি। এ ছাড়া আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল ইরানের বহুলালোচিত পরমাণু কর্মসূচি, সমুদ্রসীমাকে কেন্দ্র করে চীনের সাথে পড়শি রাষ্ট্রগুলোর বিরোধ, আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, নারী অধিকার প্রভৃতি।
জি-৭ সম্মেলনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৭ হাজার পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি অস্ট্রীয় সীমান্তে দুই হাজার পুলিশ প্রস্তুত রাখা হয়েছিল সম্ভাব্য অঘটন মোকাবেলায়। সম্মেলন শুরুর আগের দিন এই সম্মেলনবিরোধীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়। গতবার জি-৭ সম্মেলনের সময় সহিংসতা ঘটেছিল বেশি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, চীন শিল্পোন্নত হলেও অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিধায় জি-৭ গ্রুপে ঠাঁই পায়নি। 



মীযানুল করীম


 

0 comments:

Post a Comment