WHAT'S NEW?
Loading...

তুরস্কে পার্লামেন্ট নির্বাচন : কুর্দি দলের উত্থান

 


তুরস্কে ২৪তম পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছে ৭ জুন। এবারো নির্বাচনে ক্ষমতাসীন একেপি বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। অপর দিকে কুর্দিদের দলটির বিস্ময়কর উত্থান ঘটেছে।



এশিয়া ও ইউরোপ দুই মহাদেশে বিস্তৃত এই প্রভাবশালী মুসলিম রাষ্ট্রের পার্লামেন্টের সদস্যসংখ্যা ৫৫০। অর্থাৎ ২৭৬ আসনে জয়ী হলে যেকোনো দল এককভাবে সরকার গঠন করার মতো গরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে। অন্যথায় জোট গঠন করতে হবে ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকার জন্য। এবার একেপি জোট গঠন করেই সরকার চালাতে হবে। অন্যথায় সংখ্যালঘু সরকার গঠিত হলে মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যে আবার পার্লামেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করতে হতে পারে। এমনিতে চার বছর পরপর তুর্কি পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।



পার্লামেন্

টে আসনপ্রাপ্তির দিক দিয়ে প্রথম স্থানে থাকা জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) ২৫৮টি আসনে জিতেছে। দলটি আর ১৮টি আসন পেলে একাই সরকার গঠনের মতো গরিষ্ঠতা পেয়ে যেত। কামাল আতাতুর্কের অনুসারী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) ১৩২টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি (এমএইচপি) ৮১টি এবং কুর্দি সমর্থিত বাম সংগঠন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এইচডিপি) ৭৯ আসনে জয়লাভ করেছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে একেপি ৪৯.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩১১ আসনে জয়ী হয়েছিল। ১৩ বছর ধরে তুরস্ক তাদেরই শাসনাধীন।



এবার প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে একেপি ৪১ শতাংশ, সিএইচপি ২৫ শতাংশ, এমএইচপি ১৬.৫ শতাংশ এবং এইচডিপি ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে কুর্দি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রভাবশালী দল এইচডিপি। তারা ধারণার চেয়ে বেশি ভোট ও আসন বাগিয়ে নিয়ে ফলাফলের প্রত্যাশিত চিত্র পাল্টে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন একেপির কয়েকটি আসন কুর্দি সমর্থনে এইচডিপি জিতে নিয়েছে। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে উল্লেখযোগ্য অংশ কুর্দি-অধ্যুষিত। ভিন্নভাষী এই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী দীর্ঘ দিন ধরে স্বাধিকার আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সরকারি দমননীতির কারণে বহু কুর্দি হতাহত হয়েছে এবং তাদের বন্দী নেতা আবদুল্লাহ ওসালানের মাথার ওপর কঠোর দণ্ডাদেশ ঝুলছে। এবারই প্রথম, কুর্দিরা দলগতভাবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলো। দেশটির ১৭-২০ শতাংশ মানুষ কুর্দি।



এবার তুরস্কের পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৮৬ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। ভোটারদের রায়কে শ্রদ্ধা জানানো সব দলের দায়িত্ব বলে প্রধানমন্ত্রী আহমদ দাউদোগলু উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায়, তুর্কি গণতন্ত্র নিজেকে প্রমাণ করেছে। যারা আমাদের গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছে, তারা এখন লজ্জিত। আমরা নির্বাচন থেকে পাওয়া বার্তার মূল্যায়ন করে আরো দৃঢ়প্রত্যয়ে আমাদের পথ চলা অব্যাহত রাখব।



="font-size: 14pt;">একেপির জন্য সমস্যা হলো, এবার অন্তত ৩৩০ আসন না পাওয়ায় নয়া সংবিধান তৈরি এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী, দুইজনই এ ইস্যুতে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তা ছাড়া, অদূর ভবিষ্যতে আগাম নির্বাচন দেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ্য, একেপি ছাড়া অন্য তিনটি প্রধান দলই প্রেসিডেন্টশাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে।



এ দিকে সিএইচপি দল দাবি করেছে, তারাই হবে নতুন সরকার গঠনে বড় ফ্যাক্টর। কুর্দিদের দল এইচডিপি নতুন সংবিধান চায় ‘যাতে সবাই পারস্পরিক শ্রদ্ধার সাথে একত্রে বাস করতে পারে।’ কুর্দিরা দলটির বিজয় উদযাপন করেছে। এবার নির্বাচনের আগে এ দলের অফিস ও র‌্যালিতে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল। কেউ কেউ মনে করছেন, পার্লামেন্টে আসন লাভের জন্য নির্ধারিত দশ শতাংশের চেয়ে বেশি ভোটই শুধু এইচডিপি পায়নি, বিশেষ জনগোষ্ঠীর দল থেকে তারা জাতীয় পর্যায়ের দল হওয়ার দিকে এগোচ্ছে।



বর্তমান তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ‘কামালবাদী’ উগ্র সেকুলার কিংবা রোমান্টিক বামপন্থী নন। তুরস্কে দীর্ঘ দিনের ‘রাজনৈতিক ঐতিহ্য’-এর অবসান ঘটিয়ে তার দল একেপি ধর্মীয় উদারতা, তথা তুর্কি জনগণের অনুসৃত ইসলাম ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নীতি বাস্তবায়ন করে আসছে। এ কারণে তিনি কামালবাদী বা কমিউনিস্ট মহল কর্তৃক সমালোচিত। এবার নির্বাচনে তাদের প্রচারণা ছিল এরদোগান চাচ্ছেন অটোম্যান আমলের মতো ‘তুরস্কের সুলতান’ হতে এবং সেভাবে সর্বময় কর্তৃত্ব করায়ত্ত করে শাসন করতে। গত বছর তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।



উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় এরদোগান সরকারের কঠোরতাকে অগণতান্ত্রিক বলে বিভিন্ন মহল সমালোচনা করলেও তার এবং দলের জনসমর্থনভিত্তি এখনো অনেকটা শক্তিশালী। এবার নির্বাচনে এরদোগানের যে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে, তা হলো সংসদীয় শাসনব্যবস্থার বদলে রাষ্ট্রপতি শাসিতব্যবস্থা প্রবর্তনে তার আগ্রহ। নানা বিবেচনায় এ নির্বাচন একই সাথে তার জন্য এক ধরনের রেফারেন্ডামও ছিল। ইসলাম, অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে সমন্বিত করে এরদোগান এমনভাবে দীর্ঘ দিন সরকার পরিচালনা করছেন যে, এ ক্ষেত্রে সাফল্য তাকে মুসলিম বিশ্বে রোল মডেলের মর্যাদা এনে দিয়েছে। এক দশক ধরে ক্ষমতার শীর্ষে অধিষ্ঠান তার ইমেজ আন্তর্জাতিকভাবে বাড়িয়েছে। অবশ্য জাতীয় অঙ্গনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার অনেক পদক্ষেপকে ‘স্বৈরাচারী’ ও দমনমূলক বলে অভিহিত করে থাকে। তাদের অভিযোগ, নিজ ক্ষমতা সংহত করতেই তিনি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে চাচ্ছেন।


তবে এটাও সত্য, তুর্কি জাতির পিতা মোস্তফা কামাল চরম একনায়কত্ব এবং গোঁড়া সেকুলারিজমের মাধ্যমে এই মুসলিম জাতির ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের বিরাট ক্ষতি করেছেন। ‘কামালবাদ’-এর পৌনে এক শতাব্দীব্যাপী সর্বাত্মক কর্তৃত্বের সে নেতিবাচক প্রভাব দূর করার প্রয়াসে এরদোগানের দল ব্যাপক জনসমর্থন পেয়ে আসছে। জাতীয় জীবনে ধর্মনিরপেক্ষতার ইতিবাচক প্রয়োগের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চিন্তাচেতনা ও বিশ্বাসের প্রতি কার্যকর শ্রদ্ধা জ্ঞাপনই তার দলের উদ্দেশ্য। একই সাথে, তিনি দেশের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন নানাভাবে। আগে তুরস্কে ধর্ম পালনে, বিশেষত দেশটির জনগণের প্রধান ধর্ম ইসলাম প্রতিপালনে বাধা দেয়া হতো। এখন সে প্রতিবন্ধক নেই। আবার আধুনিক বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তুরস্ক যাতে এগিয়ে যায়, সেটাও সরকারের কাছে গুরুত্ববহ। ধর্মবিদ্বেষ, তথা ইসলামবিরোধী প্রপাগান্ডার ব্যাপারে এরদোগান হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।


 


মীযানুল করীম


 

0 comments:

Post a Comment