WHAT'S NEW?
Loading...

ফ্যাসিবাদ : প্রসঙ্গ বাংলাদেশ


ফরহাদ মজহার



নয় মাসের যুদ্ধ বনাম মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) ইউরোপে মতাদর্শ হিসাবে ফ্যাসিবাদের পতনের পর তৃতীয় বিশ্বের মতো একটি দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বাকশাল’ নিজের চেহারা প্রকট ভাবেই প্রদর্শন

করেছিল। একটি সামরিক-আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বাধীন বাকশালী আমলের (১৯৭২-১৯৭৫) অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জনগণের হয়েছে। পারিবারিক উত্তরাধিকারী হিসাবে শেখ হাসিনা এখন যে ফ্যাসিবাদ চর্চা করছেন ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছেন তাকে বাকশালের দ্বিতীয় সংস্করণ বলা যায়, তবে নতুন আঞ্চলিক ও বিশ্ববাস্তবতার কারণে তার মধ্যে পার্থক্যও আছে। তবে পুরানা বাকশালের মতোই বাঙালি জাতীয়তাবাদ নব্য বাকশালের আদর্শিক ভিত্তি।


অর্থনীতিতে কাছাখোলা অবাধ বাজার ব্যবস্থা অনুসরণ করলেও কাগজে কলমে ‘সমাজতন্ত্র’ ঠিকই রয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রক্ষমতাকে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যুক্ত অল্প কিছু পরিবার ও ব্যবসায়ী গ্রুপের অবাধ লুটপাট ও লুণ্ঠনের স্বর্গে পরিণত করা। একটি কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে নির্বাহী, আইনি এমনকি বৈচারিক ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রধান চরিত্র। বাকশাল দ্বিতীয় সংস্করণে সেটা খুবই স্পষ্ট। জনগণের একটি অংশের সমর্থন নিয়ে বিরোধী রাজনীতিকে সমূলে ধ্বংস করা ফ্যাসিবাদের আরেকটি চরিত্র লক্ষণ। বর্তমান ফ্যাসিবাদে আমরা তার কার্যকারিতা দেখছি।


>
ফ্যাসিবাদের এই প্রত্যাবর্তন ও টিকে থাকার শেষ চেষ্টা কতদূর বা কতদিন সম্ভব হবে তা নির্ভর করবে ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণসংগ্রামের সঠিক নীতি ও কৌশল নিরূপণ করার ওপর। এই ক্ষেত্রে সঠিক অবস্থান হচ্ছে ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের দ্বারা নিপীড়িত জনগণের সব অংশের সঙ্গে রাজনৈতিক মৈত্রী গড়ে তোলা। এর কোন বিকল্প নাই। সঠিক নীতি ও কৌশল গড়ে তোলার জন্য দেশ ও কাল ভেদে ফ্যাসিবাদের নানান চেহারা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া, জানা এবং ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা স্পষ্ট করা খুবই জরুরি। ফ্যাসিবাদ কোন গালি নয়, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আদর্শ এবং সেই আদর্শকে বাস্তব রূপ দিতে গিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে একটি চরম নিপীড়নমূলক সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে রূপান্তর। যে কারণে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের রূপ সম্পর্কে স্পষ্টতা অর্জন ছাড়া ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা করা যাবে না। ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে এর আগেও আমি লিখেছি। ‘ডিজিটাল ফ্যাসিবাদ’ নামে পুস্তিকা হিসাবে তা প্রকাশিতও হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক কর্তব্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে রেখে এখানে আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।


 


জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা
ফ্যাসিবাদ একটি রাজনৈতিক আদর্শ যার চরিত্র লক্ষণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনটি দিক সবসময়ই আলোচনার সামনে চলে আসে। এক. জাতীয়তাবাদ; দুই. বামপন্থী সমাজতন্ত্র যা পুঁজিতন্ত্রের বিরোধিতা করে কিন্তু একই সঙ্গে কমিউনিজম বা কমিউনিস্টদেরও শত্রু গণ্য করে; তিন. ইউরোপে উদ্ভূত আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার চূড়ান্ত কেন্দ্রীভবন। সেই দিক থেকে ফ্যাসিবাদ আধুনিকতা ও আধুনিক রাষ্ট্রের একটি সম্ভাব্য পরিণতি। ইউরোপে আধুনিক রাষ্ট্রধর্ম থেকে আলাদা হবার কারণে ধর্ম নিরপেক্ষতা ফ্যাসিবাদের বাহ্যিক লক্ষণ হলেও ভয়াবহ কায়দায় ইহুদিনিধনের পেছনে শুধু জাতিবাদী উন্মাদনা নয় খ্রিষ্টীয় ধর্মীয় প্রণোদনাও কাজ করেছে।



বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ ধর্মের বিপরীতে নিজেকে ভাষিক ও সাংস্কৃতিক বয়ান হিসাবে হাজির করতে গিয়ে কলকাতাকেন্দ্রিক উচ্চবর্ণের বাঙালি পরিচয়কে একমাত্র সত্য পরিচয় হিসাবে গ্রহণ করে। ফলে ইসলামকে বাঙালির শত্রু ও দুশমন ভাবা বাঙালি জাতীয়তাবাদ স্বাভাবিক গণ্য করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আচরণ সেই ভাবে নির্ধারিত হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ইসলাম ও মুসলমানদের বিপরীতে নিজেকে দাঁড় করায়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্তযুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী হিসাবে ফ্যাসিবাদ ইসলাম বিশেষত তাদের ভাষায় রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে চরম সহিংস ও সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে এবং ইসলামপন্থীদের নির্মূল করা তার কর্তব্য গণ্য করে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতি নির্ণয় করতে হলে ফ্যাসিবাদীদের বাঙালি বনাম ইসলাম বাইনারি মেনে তার উল্টাটা করা হবে ফ্যাসিবাদী বয়ানকেই উলটা ভাবে ব্যবহার করা। যে কারণে ইসলামকে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির বিপরীতে দাঁড় করানো হবে চরম নির্বুদ্ধিতা। কিম্বা বাঙালি জাতির বিপরীতে মুসলমানদেরকেও একটি ভিন্ন জাতি গণ্য করা।



ইসলামে জাতীয়তাবাদের কোন স্থান নাই। কিন্তু নিজেকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক ও কর্তা গণ্য করা কিম্বা ‘বাঙালি’ পরিচয় নিয়ে গর্ব করা মোটেও ফ্যাসিবাদ নয়। ফ্যাসিবাদ তার জাতীয়তাবাদী পরিচয়ের বাইরে অন্যদের ‘অপর’ কিম্বা তার শত্রু গণ্য করে এবং জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রগঠনের মধ্য দিয়ে অন্য সব পরিচয়ের নিরাকরণ ঘটাবার চেষ্টা করে। সমাজে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, অবিশ্বাসী যেমন একটি পরিচয়, তেমনি বাঙালিও একটি আত্মপরিচয়ের নাম। সমাজে পরিচয়ের ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য থাকে। কিন্তু ফ্যাসিবাদ জাতিবাদী পরিচয়কেই সবার একমাত্র পরিচয় হিসাবে দাবি করে এবং জাতি হিসাবে সংবিধানে ও রাষ্ট্রে বিশেষ সুবিধা আদায় করতে চায়। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ মোকাবেলার অর্থ বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার ইতিবাচক ঐতিহাসিক অবদান অস্বীকার নয়, বরং স্বীকার করে তার পর্যালোচনা করা। যাতে ইতিহাসে জাতীয়তাবাদের ভূমিকা এবং সীমা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে কোন অস্পষ্টতা না থাকে। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে ষোল কোটি মানুষ চিন্তা-চেতনার দিক থেকে কোন প্রকার হীনম্মন্যতা কিম্বা আত্মম্ভরিতা নিয়ে বিকশিত হতে পারে।



রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বসভায় হাজির করতে পেরেছে। সারা বিশ্বে ও দক্ষিণ এশিয়ায় এই অর্জন ও সাফল্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা নিজেদের এই কৃতিত্বের দাবিদার প্রমাণ করতে গিয়ে উপমহাদেশের দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে এই দেশের জনগণের স্বাধীনতার স্বপ্ন এবং লড়াই-সংগ্রামকে অস্বীকার করতে শুরু করে। ভূমিতে ইংরেজের প্রবর্তিত ব্যক্তিগত মালিকানা কায়েম ও জমিদার প্রথার বিরুদ্ধে কৃষকদের দীর্ঘ সংগ্রাম, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ, জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কৃষকের অধিকার আদায়ের জন্য ফরায়জি আন্দোলন তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা বানিয়ে সশস্ত্রযুদ্ধ, কৃষকের অধিকার আদায়ের জন্য শেরেবাংলা ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির ভূমিকা, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সংগ্রামী জীবনসহ এই দেশের বাস্তবের মাটির মানুষের রক্তাক্ত ইতিহাস মুছে ফেলার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী বয়ানের নির্মাণ শুরু হয়। পূর্ব বাংলার জনগণকে শোষণ করে ইংরেজ ও উচ্চবর্ণের হিন্দু জমিদার মিলে যে আধুনিক কিন্তু কলোনিয়াল কলকাতা শহর তৈরি হয়েছিল তাদের সাহিত্যে এবং উচ্চবর্ণের বাঙালি হিন্দুর ‘বাঙালি’ আত্মপরিচয়ই বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরম সত্যে পরিণত হয়।


বাঙালি জাতীয়তাবাদ তার বয়ানের চরিত্রের কারণে একান্তই একটি সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কল্পনা যার কারণে ইতিহাসের নির্মোহ বিচার ও পুনর্পাঠের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার বাঙালি বিশেষত হিন্দু ও মুসলিম দুই বৃহৎ সম্প্রদায়দের ঐক্য ও মৈত্রীর ঐতিহাসিক সম্ভাবনাও বাঙালি জাতিয়তাবাদীরা বাংলাদেশের জন্ম মুহূর্তেই নষ্ট করে ফেলে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী বয়ানের ব্যবহার শুরু হয় ইসলাম ও মুসলমান জনগোষ্ঠির নিজস্ব ইতিহাস ও উপলব্ধির বিরোধিতা, উচ্চবর্ণের হিন্দু সংস্কৃতির নির্বিচার পূজা এবং ভারতীয় আধিপত্য এবং আগ্রাসনের পক্ষে সাফাই গাইবার বয়ান হিসাবে। বলাবাহুল্য বাংলাদেশের জনগণ তা মেনে নেয় নি, এর বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে প্রতিরোধ শুরু হয়। আজ বাংলাদেশের রক্তাক্ত বিভাজন এবং প্রায় মীমাংসার অতীত সহিংস রাজনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক পরিণাম মাত্র।



ইউরোপে ফ্যাসিবাদের পতনের মাত্র ২৬ বছর পর যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব ছিল একটি বিস্ময়কর ঘটনা। ইউরোপের অভিজ্ঞতা ফ্যাসিবাদের উত্থান আগাম মোকাবিলার ক্ষেত্রে কোন কাজে আসে নি। পুরা ষাট ও সত্তর দশকব্যাপী রাজনীতিতে কমিউনিস্টরা সক্রিয় ছিলেন। শ্রমিক, ছাত্র ও যুবসমাজকে রাজনৈতিক ভাবে সচেতন করা এবং ইতিহাসে শ্রেণিসংগ্রামের নির্ণায়ক ভূমিকা সম্পর্কে সবক দিয়েছেন। কিন্তু জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম দানা বাঁধবার পর থেকেই দেখা গেল শ্রেণিরাজনীতি ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ঐক্য ও বিরোধের জায়গা তাঁরা মীমাংসা করতে পারছেন না। বাংলাদেশে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম প্রধান নাকি শ্রেণিসংগ্রাম মুখ্য এই তর্ক কমিউনিস্ট আন্দোলনের নীতি ও কৌশলে বিভক্তি এনেছিল এবং শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র ও যুবসমাজের আন্দোলনে কমিউনিস্টদের বিপুল অবদান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবার স্তরে তাঁরা পৌঁছাতে পারেন নি। অন্য দিকে প্রবল জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রাবল্যে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে তাঁদের নামঠিকানা মুছে যাবার অবস্থা হয়েছে।


বাঙালি জাতীয়তাবাদই বাংলাদেশের রাজনীতির নির্ণায়ক হয়ে উঠেছিল এবং জাতীয়তাবাদী চেতনায় সিক্ত কমিউনিস্টদের মধ্যে সোভিয়েতপন্থী নামে পরিচিত অংশ ‘বাকশাল’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণদের একটি অংশ ইউরোপের ফ্যাসিস্টদের মতোই জাতীয়তাবাদের পতাকার তলে পুঁজিতন্ত্রের বিরোধী হয়ে সমাজতন্ত্রের দাবি তুলেছিল, কিন্তু অন্য দিকে কমিউনিজম ও কমিউনিস্টদের বিরোধিতা করেছিল। এরা ফ্যাসিস্টদের অনুকরণে নিজের দলের নাম ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’ রাখতেও দ্বিধা করে নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এইসকল দিক প্রবল জাতীয়তাবাদী আবেগের কারণে আজও নির্মোহ বা নিরাসক্ত ভাবে জানা ও বোঝার চেষ্টা হয় নি।



বাংলাদেশ কোন ঔপনিবেশিক শক্তির সঙ্গে আপোষে কথাবার্তা বলে স্বাধীন হয় নি, ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যা হয়েছে। পাকিস্তান স্বাধীন দেশ হলেও ঔপনিবেশিকতার ধারাবাহিকতা থেকে নিজেকে ছিন্ন করে নি। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একটি আধুনিক ‘ইসলামি’ রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। মার্কিন পরামর্শ দাতাদের নির্দেশে পুঁজিতান্ত্রিক উন্নয়নের পথ অনুসরণ করেছে। যার ফল হচ্ছে কৃষিপ্রধান পূর্ব পাকিস্তান শোষণ করে পশ্চিম পাকিস্তানকে শিল্প ও কলকারখানার বিকাশ ঘটানো।


পাকিস্তানের দুই অংশের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক বিরোধ। বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা জাতিবাদী ব্যাখ্যা অনুযায়ী একে বাঙালি/পাঞ্জাবি বা বাঙালি/পাকিস্তানিদের বিরোধ হিসাবে হাজির করে। মুসলমানদের একটি ‘জাতি’ জ্ঞান করে লিখিত সংবিধানের ভিত্তিতে আধুনিক জাতিবাদী রাষ্ট্রগঠনের সমস্যা হিসাবে অবিভক্ত পাকিস্তানকে আমরা বিচার করি না। রাষ্ট্রকে পুঁজির আন্তর্জাতিক স্ফীতি ও পুঞ্জীভবনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের বিপদ, সংকট ও পরিণামে বাংলাদেশের আলাদা হয়ে যাওয়াও জাতীয়তাবাদীদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে আসে না। জাতীয়তাবাদী চিন্তাকাঠামোর মধ্যে থাকার কারণে বাংলাদেশের জনগণের পাকিস্তান পর্বের ইতিহাস পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণ ও পাকিস্তানিদের হাতে বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নিপীড়নের বয়ান হিসাবেই শুধু হাজির হয়। এটা এখনো একাত্তরের যুদ্ধ সম্পর্কে বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের প্রধান বয়ান।



মূলত ঔপনিবেশিক ধারাবাহিকতা থেকে নিজেদের ছিন্ন করবার জন্যই বাংলাদেশের জনগণকে একাত্তরে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছে। এটা নয় মাসের ‘মুক্তিযুদ্ধ’ মাত্র নয়। বরং ঔপনিবেশিকতার ধারাবাহিক শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য দীর্ঘ স্বাধীনতার যুদ্ধের ধারাবাহিকতা, তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। স্বাধীনতা বা মুক্তির জন্য যুদ্ধ শেষ হয়েছে বলা যায় না, বরং তা এখন সাম্রাজ্যবাদ ও আঞ্চলিক আগ্রাসনবিরোধী লড়াই সংগ্রামের রূপ পরিগ্রহণ করতে বাধ্য। ইংরেজের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের সশস্ত্র যুদ্ধের ইতিহাস বাংলাদেশের জনগণ ভোলেনি। সেই ইতিহাস কৃষক ও মজলুম জনগণের লড়াই-সংগ্রামের স্মৃতি হিসাবে তারা ধারণ করে। সেটা ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ হোক, কিম্বা তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা কিম্বা ব্রিটিশের চাপিয়ে দেওয়া জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস। বাঙালি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে জনগণের স্বাধীনতার চেতনার এই সব ঐতিহাসিক পশ্চাতভূমি সাধারণত অস্বীকার করা হয়। ইতিহাসের এই অস্বীকৃতির ওপর দাঁড়িয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ যে বয়ান তৈরি করে তার ওপরই বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ দানা বাঁধে এবং এখনো টিকে থাকার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


 


ভাসা ভাসা বাকশাল সমালোচনা
ইউরোপের অভিজ্ঞতার পর সাম্প্রতিক ইতিহাসে ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার নিদর্শন হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল ও বাকশালী আমলের প্রবল খ্যাতি রয়েছে। তা সত্ত্বেও ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিশেষ রূপ হিসাবে বাকশালের আলোচনা দেশে বা বিদেশে বিশেষ হয় নি বললেই চলে। সম্প্রতি শেখ হাসিনার আমলে ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার আরেকটি রূপ আমরা দেখছি। বাংলাদেশের মানুষ নতুন ভাবে ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার মোকাবিলা করছে। এর ফলে ফ্যাসিবাদ নিয়ে আলোচনা আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে বাকশালের সমালোচনা ভাসা ভাসা ও অসম্পূর্ণ। এই ক্ষেত্রে দুটো ধারা প্রচলিত রয়েছে। প্রথমত ইংরেজের পার্লামেন্টারি বা সংসদীয় রাজনীতির বিপরীতে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের নিন্দা; চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সেই কাজটি করেছেন বলে নিন্দিত হয়ে আছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির শাসনব্যবস্থাও গণতান্ত্রিক হতে পারে, কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির মধ্য দিয়ে কিভাবে ফ্যাসিস্ট রূপ পরিগ্রহণ করেছে তার আলোচনা কমই করা হয়েছে। উল্লেখ করা দরকার যে বাংলাদেশের জন্য সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির চেয়ে ভাল এটা নিছকই একটি অনুমান। দুইশ বছর ইংরেজের গোলামির কারণে ইংরেজের ব্যবস্থা নকল করবার অধিক কোন বাসনা এই অনুমানের পেছনে কাজ করে নি।



ইংরেজ যে রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা নিজ দেশে গড়ে তুলেছে তার গোড়ায় রয়েছে ইংরেজের নিজের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিচারব্যবস্থার আভ্যন্তরীণ বিবর্তন। যে কারণে যুক্তরাজ্যের কোন লিখিত সংবিধান নাই। যুক্তরাজ্যের সংবিধান ‘অলিখিত’ (unwritten) ও ‘অসংবিধিবদ্ধ’ (uncodified). রাষ্ট্রব্যবস্থা (body politic) বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন আইন, আদালতের রায়, নীতি, পরদেশের সঙ্গে চুক্তি ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। অন্যান্য দেশের মতো তার কোন পবিত্র মহাগ্রন্থ নাই যাকে একক ও একচ্ছত্র ‘সংবিধান’ বলা হয়। যদি ইংরেজের অনুকরণই আমাদের আরাধ্য হয় তাহলে লিখিত সংবিধানের দরকার হোলো কেন?



তাহলে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ইংরেজের শাসনব্যবস্থার অনুকরণ এবং স্বাধীনতার পর ঔপনিবেশিক আইনের নির্বিচার ধারাবাহিকতা কাম্য ছিল না। না সংবিধানে, না রাষ্ট্র গঠনে না বিচারব্যবস্থায়। অর্থাৎ আমাদের স্বাধীন ভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র নিয়ে ভাবার দরকার ছিল। বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার যদি আদৌ কোন সত্য থাকে তাহলে কোন কিছুই পর্যালোচনা ছাড়া আমরা গ্রহণ করতে পারি না। বাকশাল একদলীয় শাসন ও প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি চালু করেছে এই সমালোচনা এই সব কারণে ভাসা ভাসা ও অসম্পূর্ণ।
বাকশালের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সমালোচনাও একই ভাবে ভাসা ভাসা। রক্ষীবাহিনী গঠন এবং রক্ষীবাহিনীর হাতে ৪০ থেকে মতান্তরে ৬০ হাজার বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের হত্যা। এই সমালোচনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নৈতিক সমালোচনার অধিক কিছু বাংলাদেশে হয়ে উঠেছে বলে দেখি নি। রক্ষীবাহিনী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করছে, এটা নৈতিক দিক থেকে খারাপ কাজ। কিন্তু শেখ মুজিব সেটা চাইলেও কিভাবে ও কী ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা থাকার কারণে এই সব হত্যাকাণ্ড ঘটার পরেও তাঁকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় নি এই প্রশ্ন আমরা তুলি না। আমরা মনে করি ‘তিনি জাতির জনক’ এবং একজন অসীম ক্ষমতাধর ব্যক্তি, তাঁর ব্যক্তিত্বের কারণেই তিনি জনগণ, রাষ্ট্র বা আইন-আদালতের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন।


আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে তাঁর হাত রঞ্জিত হলেও তাঁকে মহাত্মার আসনেই আমাদের রাখতে হবে। বলা হয় তিনি অপ্রতিরোধ্য বলেই এই সব হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। এই অনুমান থেকেই ব্যক্তি হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানের অপ্রতিরোধ্য শক্তি সম্পর্কে একটি পরিণামদর্শী ধারণা গড়ে ওঠে। এই ধারণার কারণে তাঁকে হত্যা ছাড়া বাকশালী শাসনের অবসান ঘটানো সম্ভব ছিল না। এই অনুমান সেই সময় সমাজে দানা বেঁধে ওঠা অসম্ভব কিছু নয়। দুর্ভাগ্য যে সেটাই ঘটেছে। তাঁর করুণ পরিণতি এই অনুমানের ফল কিনা সেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয় হতে পারে। এখনো এমন অনেক পণ্ডিতকেও দেখি ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে যারা বলেন শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা ছাড়া বাকশাল শাসনের অবসান ঘটানো যেতো না।



যদি স্বাধীনতা বা মুক্তির জন্যই আমরা যুদ্ধ করে থাকি তাহলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ঘটবার কারণ আমরা এত দিনে জানতাম। নিদেনপক্ষে শেখ মুজিব সরকারের নৈতিক সমালোচনার সীমা ছাড়িয়ে শেখ মুজিব যে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তার চরিত্রের তর্ক আমাদের রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে উঠতে পারত। যদি ব্রিটিশদেরই আমরা অনুকরণ করতে চাই তাহলে জানতাম তাদের অলিখিত নিয়ম, বিধিবিধান ও ঐতিহ্য রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের সম্পর্ক ঠিকই নির্ণয় করে দিয়েছে যাতে আইন ও আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে কাউকে হত্যা দূরে থাকুক, শাস্তি দেওয়াও রাষ্ট্রের ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের যে সম্পর্ক সমাজের বিধিবিধান, আইন ও ঐতিহ্য হিসাবে বহাল থাকে, ক্ষমতাসীন শক্তি স্রেফ ক্ষমতায় থাকার কারণে বলপ্রয়োগ কিম্বা আইন ও বিচারব্যবস্থার স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তা লঙ্ঘন করতে পারে না। ঐতিহ্য হোক কিম্বা বিধিবদ্ধ আইনের কারণে হোক রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের সম্পর্ক ক্ষমতাসীন সরকার রাতারাতি জনগণের কোন সম্মতি ছাড়া বদলে ফেলতে পারে না।



ফ্যাসিবাদের প্রাবল্যের কারণে সংবিধান অলিখিত হোক কি লিখিত হোক, রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের সম্পর্ক নির্ণয়ের গুরুত্ব আমরা আজো উপলব্ধি করি না। বাকশালের সমালোচনা ভাসা ভাসা ও অসম্পূর্ণ বলছি এ কারণেই। উপলব্ধি করলে বাকশালের সমালোচনা নিছকই সরকারের সহিংস আচরণ বা স্বেচ্ছাচারিতার নৈতিক নিন্দা হয়ে থাকত না। একটি যুদ্ধোত্তর দেশে রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের কী ধরনের সম্পর্ক আদর্শ হতে পারে সেই তর্ক তৈরি হোত। যা হয়ে উঠত যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে রাষ্ট্রচিন্তা ও রাষ্ট্র গঠনের তর্ক ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার পর্যালোচনার মধ্য দিয়েই তা আমাদের করতে হোত। জাতীয়তাবাদ, জাতিরাষ্ট্র, ইউরোপের ইতিহাসে আধুনিকতা, আধুনিক রাষ্ট্র ও ফ্যাসিবাদের ইতিহাস তখন আমাদের চিন্তার কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে উঠত।



অতি সহজ প্রশ্নও আমরা তুলিনি। যেমন, একটি সদ্য স্বাধীনতা লাভ করা দেশে সংসদীয় রাজনীতি প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির চেয়ে কেন ভাল এবং লিখিত সংবিধানের ভিত্তিতে যদি রাষ্ট্র গঠন করতে হয় তাহলে ঔপনিবেশিক ইংরেজ জাতির অনুকরণের চেয়ে উপনিবেশবিরোধী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লিখিত গঠনতন্ত্র গণতন্ত্রের উচ্চতর আদর্শ নয় কেন? শেখ মুজিবুর রহমানের করুণ ও অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাকশালের দৃশ্যমান তিরোধান ঘটে। কিন্তু ব্যক্তির হত্যা মানে আওয়ামী-বাকশালী মতাদর্শের নিহত হওয়া নয়। বাকশাল বা বাকশাল জাতীয় চিন্তা নানান ভাবে ও নানান রূপে আমাদের মধ্যে রয়েছে।



বাকশালের সমালোচনা করতে গিয়ে যেসব বিষয়ের প্রতি বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয় সেসব হচ্ছে :
১. একদলীয় শাসন বা বহুদলীয় সংসদীয় সরকারপদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন। আসলে সেটা ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের চরম ও একচ্ছত্র কর্তৃত্বপরায়ণ ক্ষমতা তৈরি। তুলনায় পদ্ধতির পার্থক্য থাকলেও শেখ হাসিনাও চরম কর্তৃত্বপরায়ণ ক্ষমতাই তৈরি করেছেন। পার্থক্য হচ্ছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীসহ আনা এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী, আইন প্রণয়নী ও বৈচারিক ক্ষমতা দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করা।
২. বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে ‘বাকশাল’ নামে একটি একক রাজনৈতিক দল গঠন। অর্থাৎ সব রাজনৈতিক বিরোধিতা অসম্ভব করে তোলা। এখন একই কাজ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা ও গুম-খুনের মধ্য দিয়ে ঘটছে। এটা স্পষ্ট যে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করাই ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশ্য। শেখ মুজিবের বাকশাল আইন করে সব দল বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা দমন, পীড়ন, নির্যাতন ও গুম করে কার্যকর বিরোধিতাকে নিশ্চিহ্ন করছেন। শেখ মুজিবও আওয়ামী-বাকশালী রাজনীতিবিরোধীদের টার্গেট করে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলেন এবং বিরোধী রাজনীতি টিকে থাকার সম্ভাবনা শারীরিক ভাবে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন।
৩. সকল সশস্ত্র, সংঘবদ্ধ ও নির্বাহী ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারি ও আধা সরকারি সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের বাকশালে যোগদান বাধ্যতামূলক করা। বাকশালব্যবস্থার অধীনে অদলীয় শ্রেণি ও পেশাভিত্তিক সংগঠন এবং গণসংঠন করার কোন অধিকার কাউকে দেওয়া হয় নি। কেউ ট্রেড ইউনিয়ন করতে হলে তাকে বাকশালের অঙ্গদল শ্রমিক লীগেরই অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। এই ব্যবস্থায় বাকশালেরই অঙ্গসংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় কৃষক লীগ, জাতীয় মহিলা লীগ, জাতীয় যুবলীগ এবং জাতীয় ছাত্রলীগ বাদে কোন শ্র্রমিক, কৃষক, মহিলা, যুব ও ছাত্রসংগঠন করবার কোন অধিকার কারো ছিল না।
৪. চারটি সরকারপন্থী পত্রিকা ছাড়া সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া। শেখ হাসিনার আমলেও সরকারপন্থী ছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতি সমবেদনাসম্পন্ন গণমাধ্যমের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে গিয়েছে।
(চলবে)


মার্চ ৩০ ২০১৫। শ্যামলী


 

0 comments:

Post a Comment