অ্যাপলের বহুলালোচিত স্মার্টওয়াচ উন্মোচন করেছে অ্যাপল। আগামী মাসের ২৪ তারিখ থেকে ডিভাইসটি বাজারে পাওয়া যাবে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে অগ্রিম অর্ডারের জন্য উন্মুক্ত হবে আগামী মাসের ১০ তারিখে। ৩৪৯ ডলার থেকে শুরু করে ডিভাইসটির দাম ১৭ হাজার ডলার পর্যন্ত হবে। লিখেছেন আহমেদ ইফতেখার
অ্যাপল ওয়াচের বিভিন্ন সংস্করণ তৈরিতে বিভিন্ন পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে। ৩৮ মিলিমিটারের সাধারণ সংস্করণের ডিভাইসটির কাঠামো অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। আর একই আকারের গোল্ডেন অ্যাডিশনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ দিয়ে। মজবুত কাঠামোর এ সংস্করণে স্যাফায়ারের তৈরি পর্দা ব্যবহার করা হয়েছে। অ্যাপলের নতুন এ ডিভাইসে হৃদস্পন্দনের মতো স্বাস্থ্যগত তথ্য যেমন জানা যাবে, অন্য দিকে বহুমুখী অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগও থাকছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা জানান, বিশ্বব্যাপী অ্যাপলের একটি শক্ত গ্রাহক ভিত্তি রয়েছে। এ বিপুলসংখ্যক গ্রাহক অ্যাপল ওয়াচে আগ্রহী হবেন বলেই মনে করছেন তারা। কিন্তু ডিভাইসটিতে কোনো বিশেষ অ্যাপ যুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা দেয়া হয়নি। ডিভাইসটিতে কোনো বিশেষ অ্যাপ যুক্ত করা হলে সাধারণ গ্রাহকদের কাছেও অ্যাপল ওয়াচের জনপ্রিয়তা বাড়বে। বিশেষ অ্যাপ বলতে মূলত অ্যাপল ওয়াচের বৈশিষ্ট্যসূচক অ্যাপকে বোঝানো হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে আইফোন সিক্স ও সিক্স প্লাসের পর এবার অ্যাপল তাদের স্মার্টওয়াচ দিয়ে বড় ব্যবসায় করতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।
অ্যাপল সিইও টিম কুক জানিয়েছেন, ২৪ এপ্রিল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি শুরু স্মার্টওয়াচটি। তার আগে ১০ এপ্রিল থেকে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ডিভাইসটির অর্ডার নেয়া শুরু হবে।
স্মার্ট ফিচার
স্মার্টওয়াচের বাজারে দেরিতে এলেও বেশ কিছু নতুন ফিচার নিয়ে হাজির হচ্ছে অ্যাপলের প্রথম পরিধেয় পণ্যটি।
ঘড়িটির ডিসপ্লের সাইজ দুইটি। একটি ১ দশমিক ৭ ইঞ্চি, অন্যটি ১ দশমিক ৫ ইঞ্চি। আর মডেলের সংখ্যা ৩৮টি। যেগুলোর কেচিং ও বেল্ট অ্যালুমনিয়াম, স্টিল ও গোল্ডের তৈরি।
একটানা ১৮ ঘণ্টা সেবা দেবে ঘড়িটি। তবে অন্য ফিচারগুলো বন্ধ থাকলে চলবে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত। শতভাগ চার্জ হতে সময় নেবে ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিট।
এতে থাকাছে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও উইচ্যাট ব্যবহারের সুবিধা।
গাড়ি থেকে হোটেলরুমের দরজা পর্যন্ত লক করা যাবে অ্যাপল ওয়াচের মাধ্যমে। ফোন রিসিভ, হেলথ ট্যাকিংয়ের সাথে অ্যাপল পে ফিচারও যুক্ত আছে ঘড়িটিতে।
স্মার্টওয়াচের জন্য এরই মধ্যে হাজারের বেশি অ্যাপলিকেশনের আপডেট নিয়ে কাজ করছে অ্যাপল।
আইওএস চালিত গ্যাজেটের সাথে যুক্ত করে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ঘড়িটি।
ফোনের কল, মেসেজ, মেইলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর নোটিফিকেশন দেখা যাবে স্মার্ট ঘড়িটিতে। কোনো নোটিফিকেশন এলে ভাইব্রেট করে জানান দেবে ঘড়িটি।
আপনার ফিটনেস মনিটর করার জন্য প্রয়োজনীয় সেন্সর আছে ঘড়িটিতে। এ ছাড়াও একটি হার্ট রেট মনিটরও থাকছে।
দু’টি বাটন থাকবে অ্যাপল ওয়াচের সব মডেলেই।
হার্টরেট সেন্সর ও অ্যাক্সেলেরোমিটার থাকবে অ্যাপল ওয়াচে। তবে জিপিএস থাকবে না ডিভাইসটিতে।
নোটিফিকেশন এলেই ব্যবহারকারীর ত্বকে ‘আলতো ট্যাপ’ করে জানান দেবে অ্যাপল ওয়াচ। প্রিয়জনও অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহারকারী হলে ওই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের জানান দেয়া নিজের হৃদস্পন্দন সম্পর্কেও।
তিনটি মডেল
তিনটি মডেলে কিনতে পাওয়া যাবে অ্যাপল ওয়াচ। মডেলগুলো হলো অ্যাপল ওয়াচ, অ্যাপল ওয়াচ স্পোর্টস, অ্যাপল ওয়াচ অ্যাডিশন। অ্যাপল ওয়াচের মডেলভেদে ব্যবহার করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন উপাদান। অ্যাপল ওয়াচে ব্যবহার করা হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল, অ্যাপল ওয়াচ স্পোর্টসে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যানোডাইজড অ্যালুমিনিয়াম এবং অ্যাপল ওয়াচ অ্যাডিশন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ। অ্যাপল ওয়াচ আর অ্যাপল ওয়াচ অ্যাডিশনের ডিসপ্লেতে ব্যবহার করা হয়েছে স্যাফায়ার ক্রিস্টাল। আর অ্যাপল ওয়াচ স্পোর্টসে ব্যবহার করা হয়েছে আয়ন-এক্স গ্লাস ডিসপ্লে। তিন মডেলের সবগুলো কিনতে পাওয়া যাবে দু’টি ভিন্ন আকারে; ৩৮ মিলিমিটার বা ১.৫ ইঞ্চি এবং ৪২ মিলিমিটার বা ১.৭ ইঞ্চি।
তিনটি মডেলই কিনতে পাওয়া যাবে দু’টি রঙে। অ্যাপল ওয়াচে স্টেইনলেস স্টিল ও কালো স্টেইনলেস স্টিল, স্টোর্টস মডেলটি পাওয়া যাবে রুপালি ও ধূসর অ্যালুমিনিয়াম রঙে। অ্যাপল ওয়াচ অ্যাডিশন পাওয়া যাবে ১৮ ক্যারেটের ‘ইয়েলো গোল্ড’ আর ‘রোজ গোল্ড’ রঙে।
ইন্টারনেট সংযোগের জন্য লাগবে আইফোন
অ্যাপল ওয়াচের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চাইলে বাড়তি ডিভাইস হিসেবে লাগবে আইফোন। আইফোনের সবগুলো মডেলের সাথে কাজ করবে না অ্যাপল ওয়াচ। অন্তত আইওএস ৮ অপারেটিং সিস্টেম চালিত আইফোন ৫ বা পরের মডেল প্রয়োজন হবে অ্যাপল ওয়াচ থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চাইলে। ব্লুটুথের মাধ্যমে আইফোনের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে অ্যাপল ওয়াচ।
দরদাম
অ্যাপল ওয়াচের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডিভাইসটির কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন টিম কুক। তিনি জানিয়েছেন, সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সাধ্যের উপযোগী দাম ধরা হয়েছে ডিভাইসটির। ঘড়িটি তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল, সোনা ও স্যাফায়ার ক্রিস্টাল। ভেতরের হার্ডওয়্যার আর ফিচারের কোনো পার্থক্য না থাকলেও কেসিংয়ের উপাদানের ভিত্তিতেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ডিভাইসগুলোর।
ঘড়িটির বেল্টে ব্যবহৃত ধাতুর ওপর নির্ভর করে মাত্র ৩৪৯ মার্কিন ডলার থেকে শুরু করে ১৭ হাজার ডলার পর্যন্ত দাম হবে ডিভাইসটির। এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিক্রির জন্য অ্যাপল অ্যাডিশনটির দাম পড়বে ৫৪৯ মার্কিন ডলার থেকে ১,০৯৯ ডলার। স্বর্ণ দিয়ে তৈরি মডেলের দাম পড়বে ১০ হাজার মার্কিন ডলার।
সাধারণ সংস্করণের ছোট ঘড়িটির দাম পড়বে ৩৪৯ ডলার। আর স্ট্যান্ডার্ড আকারের ডিভাইসটির দাম পড়বে ৫৪৯ ডলার। গোল্ডেন অ্যাডিশনের অ্যাপল ওয়াচও আসছে বাজারে। সে ক্ষেত্রে ডিভাইসটির দাম ১০ হাজার ডলার থেকে ১৭ হাজার ডলারের মধ্যে ওঠানামা করবে। স্বর্ণ ও স্যাফায়ার ক্রিস্টাল নির্মিত মডেলগুলোর দাম রাখা হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
ওয়াচের প্রতি আগ্রহ কম
আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে পণ্যটি আন্তর্জাতিক বাজারে পাওয়া যাবে। সম্প্রতি মার্কিনিদের মধ্যে এক জরিপ চালিয়ে এ তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ৬৯ শতাংশ ডিভাইসটি কিনতে আগ্রহী নয়। পরিধেয় প্রযুক্তি পণ্যের বাজার প্রসার লাভ করেছে উল্লেখযোগ্য হারে। স্যামসাং, সনি ও হুয়াউইয়ের মতো অনেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে পরিধেয় পণ্য বাজারে ছেড়েছে। এবার সংশ্লিষ্ট খাতে প্রবেশ করল অ্যাপল।
রয়টার্সের অনলাইন এ জরিপে অংশ নেয় এক হাজার ২৪৫ জন মার্কিনি। দেখা যায়, জরিপে অংশ নেয়া খুব কমসংখ্যক মানুষ অ্যাপল ওয়াচের কার্যকারিতা সম্পর্কে সচেতন। এ ছাড়া জরিপটিতে অংশ নেয়া অর্ধেকেরই মন্তব্য ছিল তারা অ্যাপল ওয়াচ সম্পর্কে শুনেছেন। প্রায় ১৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ডিভাইসটির বিষয়ে আগ্রহী। কিন্তু এর পূর্ণাঙ্গ কার্যকারিতার জন্য আইফোনের সাথে সংযোগ করে নিতে হয়। অর্থাৎ অ্যাপল ওয়াচের সাথে আইফোনও থাকতে হবে। কিন্তু আইফোন না থাকার কারণে তারাও অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
0 comments:
Post a Comment